শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২০
আমাদের কথা।। মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ২।। ১৫ আগষ্ট, ২০২০
তিনটি কবিতা ।। সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়
মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ২।। ১৫ আগষ্ট, ২০২০
সবর্ণা চট্টোপাধ্যায় ।। তিনটি কবিতা
লকডাউনের ডায়রী থেকে ১
আতঙ্কে কেঁপে উঠছি থেকে থেকে।
ভয় হয় রাস্তার শূন্যতায়।
কতদিন আর কতদিন জানা নেই?
সে এক অদৃশ্য ঘাতক
জানা নেই কোনদিক থেকে ছুটে আসবে মরণাস্ত্র
নেই বিশল্যকরণী
চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়
কেমন আছে বৃদ্ধ মা বাবা?
ভোরের আলো?
নিজেকে এক খোলসের ভেতর জমাতে জমাতে
ঠিকরে আসে চোখ
মন ভোলাতে বেছে নিই বাহারী প্রসাধন।
নির্মল এক আকাশের কাছে
উগড়ে দিই ব্যর্থ যন্ত্রণা।
চাল ডাল তেল নুন।
প্রয়োজন ব্যাস এটুকুই।
ঘরের ভেতর তিনটে গলার স্বর। জড়িয়ে ধরছে
ক্রমশ একে অপরকে...
আসলে বিষণ্ন মানুষ বড়ো দুর্বল।
অনিদ্রার দুঃস্বপ্ন দেখে খোলা চোখে। যদি আর
না পারি দিতে অন্ন জল?
লকডাউনের ডায়রী থেকে ২
শূন্যতায় গায়ে আছরে পড়ছে হাওয়া
ত্রস্ত মানুষ ছুটে চলেছে ক্রমশ অন্ধ কোটরে।
দৃশ্য থেকে বহুদূরে, আলোহীন কূপের ভেতর
বাড়ছে দেহের উত্তাপ।
খাদ্য নেই, নিথর বাতাস…
মুখোশের আড়ালে লাল হয়ে ওঠা চোখ
ভয়াবহতায় হাহুতাশ করছে ঈশ্বরের দরবারে।
এ মৃত্যুভয় আমাকে নিয়ে যায় অদৃশ্য কবরে।
ভাতের গন্ধ নেই। স্পর্শ নেই।
আমরা ছিনিয়ে নিই আমাদের ভাগ
যারা অভুক্ত তারা আমাদের কেউ না!
বুকে পাথর রেখে চওড়া করছি পথ
নিষ্ঠুর জীবন।
ভেসে আসা পরিযায়ী চিৎকার
চোখে জল,
ঢেকে দিই তুলোর বালিশের নীচে।
স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ে
ঘর্মাক্ত মৃতদেহগুলোর ওপর!
লকডাউনের ডায়রী থেকে ৩
অসহায় আকাশ
কাতারে কাতারে নিঃশ্বাস ফেলছে তারা
একে অন্যের ঘাড়ে,
দুমড়ানো মুচরানো শরীর
পায়ে হাঁটা বিস্তর পথ
ঘরে ফেরার কি কঠিন আকুতি!
তবু অসহায়। আমরা বড়ো অসহায়
পারছি না বাড়িয়ে দিতে হাত
এখন আর স্পর্শের ঋণ নেই
নেই মানবতার।
দুহাতে জড়িয়ে আছি শুধু নিজেদের
আগামী রাত্রির আতঙ্ক নিয়ে
হুঁশ নেই আর,
কি রাষ্ট্র কি মানুষ কি প্রতিশ্রুতি
শুধু সত্য জীবন
নিজেকে আটক করে, পেরিয়ে যাওয়া
আরো একটা দুর্বোধ্য পাহাড়!
স্মরণঃ সুমিত চট্টোপাধ্যায় ব্রততী ঘোষরায়
মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ২।। ১৫ আগষ্ট, ২০২০
স্মরণঃ সুমিত চট্টোপাধ্যায় ব্রততী ঘোষরায়
ধারাবাহিক পদ্য-নভেলেট/রাজীব সিংহ।। মত্তনীল অন্ধকারে
মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ২।। ১৫ আগষ্ট, ২০২০
রাজীব সিংহ।। মত্তনীল অন্ধকারে
ফিরে দেখাঃ জন্মদিনে সুকান্ত ভট্টাচার্য
মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ২।। ১৫ আগষ্ট, ২০২০
ফিরে দেখাঃ জন্মদিনে সুকান্ত ভট্টাচার্য
সুকান্ত ভট্টাচার্য-এর কবিতা
মধ্যবিত্ত '৪২
পৃথিবীময়
যে সংক্রামক রোগে,
আজকে
সকলে ভুগছে একযোগে,
এখানে
খানিক তারই পূর্বাভাস
পাচ্ছি, এখন
বইছে পুব-বাতাস।
উপায়
নেই যে সামলে ধরব হাল,
হিংস্র
বাতাসে ছিঁড়ল আজকে পাল,
গোপনে
আগুন বাড়ছে ধানক্ষেতে,
বিদেশী
খবরে রেখেছি কান পেতে।
সভয়ে
এদেশে কাটছে রাত্রিদিন,
লুব্ধ
বাজারে রুগ্ন স্বপ্নহীন।
সহসা
নেতারা রুদ্ধ- দেশ
জুড়ে
'দেশপ্রেমিক' উদিত
ভুঁই ফুঁড়ে।
প্রথমে
তাদের অন্ধ বীর মদে
মেতেছি
এবং ঠকেছি প্রতিপদে;
দেখেছি
সুবিধা নেই এ কাজ করায়
একক
চেষ্টা কেবলই ভুল ধরায়।
এদিকে
দেশের পূর্ব প্রান্তরে
আবার
বোমারু রক্ত পান করে,
ক্ষুব্ধ
জনতা আসামে, চাটগাঁয়ে,
শাণিত-দ্বৈত-নগ্ন অন্যায়ে;
তাদের
স্বার্থ আমার স্বার্থকে,
দেখছে
চেতনা আজকে এক চোখে।।
হে
মহাজীবন
হে-মহাজীবন, আর
এ কাব্য নয়
এবার
কঠিন, কঠোর
গদ্যে আনো,
পদ-লালিত্য-ঝঙ্কার
মুছে যাক
গদ্যের
কড়া হাতুড়িকে আজ হানো!
প্রয়োজন
নেই, কবিতার
স্নিগ্ধতা—
কবিতা
তোমায় দিলাম আজকে ছুটি,
ক্ষুধার
রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়:
পূর্ণিমা-চাঁদ
যেন ঝল্সানো রুটি॥
ছাড়পত্র
যে
শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে
তার
মুখে খবর পেলুম:
সে
পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন
বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত
করে অধিকার
জন্মমাত্র
সুতীব্র চীৎকারে।
খর্বদেহ
নিঃসহায়, তবু
তার মুষ্টিবদ্ধ হাত
উত্তোলিত, উদ্ভাসিত
কী
এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।
সে
ভাষা বোঝে না কেউ,
কেউ
হাসে, কেউ
করে মৃদু তিরস্কার।
আমি
কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে
ভাষা
পেয়েছি
নতুন চিঠি আসন্ন যুগের-
পরিচয়-পত্র
পড়ি ভূমিষ্ঠ শিশুর
অস্পষ্ট
কুয়াশাভরা চোখে।
এসেছে
নতুন শিশু, তাকে
ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ
পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত
আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে।
চলে
যেতে হবে আমাদের।
চলে
যাব- তবু
আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে
পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ
বিশ্বকে এ-শিশুর
বাসযোগ্য ক'রে
যাব আমি-
নবজাতকের
কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে
সব কাজ সেরে,
আমার
দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে
যাব আশীর্বাদ,
তারপর
হব ইতিহাস।।
কনভয়
হঠাৎ
ধূলো উড়িয়ে ছুটে গেল
যুদ্ধফেরত
এক কনভয়ঃ
ক্ষেপে-ওঠা
পঙ্গপালের মতো
রাজপথ
সচকিত ক'রে
আগে
আগে কামান উঁচিয়ে,
পেছনে
নিয়ে খাদ্য আর রসদের
সম্ভার।
ইতিহাসের
ছাত্র আমি.
জানালা
থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম
ইতিহাসের
দিকে।
সেখানেও
দেখি উন্মত্ত এক কনভয়
ছুটে
আসছে যুগযুগান্তের রাজপথ
বেয়ে।
সামনে
ধূম-উদ্গীরণরত
কামান,
পেছনে
খাদ্যশস্য আঁকড়ে-ধরা
জনতা-
কামানের
ধোঁয়ার আড়ালে আড়ালে
দেখলাম,
মানুষ।
আর
দেখলাম ফসলের প্রতি তাদের
পুরুষানুক্রমিক
মমতা।
অনেক
যুগ, অনেক
অরণ্য,পাহাড়, সমুদ্র
পেরিয়ে
তারা
এগিয়ে আসছে; ঝল্সানো
কঠোর মুখে।।
সিগারেট
আমরা
সিগারেট।
তোমরা
আমাদের বাঁচতে দাও না কেন?
আমাদের
কেন নিঃশেষ করো পুড়িয়ে?
কেন
এত স্বল্প-স্থায়ী
আমাদের আয়ু?
মানবতার
কোন্ দোহাই তোমরা পাড়বে?
আমাদের
দাম বড় কম এই পৃথিবীতে।
তাই
কি তোমরা আমাদের শোষণ করো?
বিলাসের
সামগ্রী হিসাবে ফেলো
পুড়িয়ে?
তোমাদের
শোষণের টানে আমরা ছাই হই:
তোমরা
নিবিড় হও আরামের উত্তাপে।
তোমাদের
আরামঃ আমাদের মৃত্যু।
এমনি
ক'রে
চলবে আর কত কাল?
আর
কতকাল আমরা এমনি নিঃশব্দে
ডাকব
আয়ু-হরণকারী
তিল তিল অপঘাতকে?
দিন
আর রাত্রি - রাত্রি
আর দিন;
তোমরা
আমাদের শোষণ করছ সর্বক্ষণ
আমাদের
বিশ্রাম নেই, মজুরি
নেই
নেই
কোনো অল্প-মাত্রার
ছুটি।
তাই, আর
নয়;
আর
আমরা বন্দী থাকব না
কৌটোয়
আর প্যাকেটে;
আঙুলে
আর পকেটে
সোনা-বাঁধানো 'কেসে' আমাদের
নিঃশ্বাস হবে না রুদ্ধ।
আমরা
বেরিয়ে পড়ব,
সবাই
একজোটে, একত্রে-
তারপর
তোমাদের অসতর্ক মুহূর্তে
জ্বলন্ত
আমরা ছিট্কে পড়ব তোমাদের
হাত থেকে
বিছানায়
অথবা কাপড়ে;
নিঃশব্দে
হঠাৎ জ্বলে উঠে
বাড়িসুদ্ধ
পুড়িয়ে মারব তোমাদের
যেমন
করে তোমরা আমাদের পুড়িয়ে
মেরেছ এতকাল।
দেশলাই কাঠি
আমি
একটা ছোট্ট দেশলাইয়ের কাঠি
এত
নগণ্য, হয়তো
চোখেও পড়ি না :
তবু
জেনো
মুখে
আমার উসখুস করছে বারুদ-
বুকে
আমার জ্বলে উঠবার দুরন্ত
উচ্ছ্বাস ;
আমি
একটা দেশলাইয়ের কাঠি ।
মনে
আছে সেদিন হুলুস্থূল বেধেছিল ?
ঘরের
কোণে জ্বলে উঠেছিল আগুন-
আমাকে
অবজ্ঞাভরে না-নিভিয়ে
ছুড়ে ফেলায় !
কত
ঘরকে দিয়েছি পুড়িয়ে,
কত
প্রাসাদকে করেছি ধূলিসাৎ
আমি
একাই-ছোট্ট
একটা দেশলাই কাঠি ।
এমনি
বহু নগর, বহু
রাজ্যকে দিতে পারি ছারখার
করে
তবুও
অবজ্ঞা করবে আমাদের ?
মনে
নেই ? এই
সেদিন-
আমরা
সবাই জ্বলে উঠেছিলাম একই
বাক্সে ;
চমকে
উঠেছিলে-
আমরা
শুনেছিলাম তোমাদের বিবর্ণ
মুখের আর্তনাদ ।
আমাদের
কী অসীম শক্তি
তা
তো অনুভব করছে বারংবার ;
তবু
কেন বোঝো না,
আমরা
বন্দী থাকব না তোমাদের পকেটে
পকেটে,
আমরা
বেরিয়ে পড়ব, আমরা
ছড়িয়ে পড়ব
শহরে, গঞ্জে, গ্রামে-দিগন্ত
থেকে দিগন্তে ।
আমরা
বারবার জ্বলি, নিতান্ত
অবহেলায়-
তা
তো তোমরা জানোই !
কিন্তু
তোমরা তো জানো না :
কবে
আমরা জ্বলে উঠব-
সবাই-শেষবারের
মতো ॥
নিবৃত্তির
পূর্বে
দুর্বল
পৃথিবী কাঁদে জটিল বিকারে,
মৃত্যুহীন
ধমনীর জ্বলন্ত প্রলাপ;
অবরুদ্ধ
বে তার উন্মাদ তড়িৎ;
নিত্য
দেখে বিভীষিকা পূর্ব
অভিশাপ।
ভয়ার্ত
শোণিত-চক্ষে
নামে কালোছায়া,
রক্তাক্ত
ঝটিকা আনে মূর্ত শিহরণ
দিক্প্রান্তে
শোকাতুরা হাসে ক্রূর হাসি,
রোগগ্রস্ত
সন্তানের অদ্ভুত মরণ।
দৃষ্টিহীন
আকাশের নিষ্ঠুর সান্ত্বনাঃ
ধূ-ধূ
করে চেরাপুঞ্জি-
সহিষ্ণু
হৃদয়।
ক্লান্তিহারা
পথিকের অরণ্য ক্রন্দনঃ
নিশীথে
প্রেতের বুকে জাগে মৃত্যুভয়।।
ঐতিহাসিক
আজ
এসেছি তোমাদের ঘরে ঘরে
পৃথিবীর
আদালতের পরোয়ানা নিয়ে
তোমরা
কি দেবে আমার প্রশ্নের
কৈফিয়ৎঃ
কেন
মৃত্যুকীর্ণ শবে ভরলো পঞ্চাশ
সাল?
আজ
বাহান্ন সালের সূচনায় কি
তার উত্তর দেবে?
জানি! স্তব্ধ
হয়ে গেছে তোমাদের অগ্রগতির
স্রোত,
তাই
দীর্ঘশ্বাসের ধোঁয়ায় কালো
করছ ভবিষ্যৎ
আর
অনুশোচনার আগুনে ছাই হচ্ছে
উৎসাহের কয়লা।
কিন্তু
ভেবে দেখেছ কি?
দেরি
হয়ে গেছে অনেক, অনেক
দেরি!
লাইনে
দাঁড়ানো অভ্যেস কর নি
কোনোদিন,
একটি
মাত্র লক্ষ্যের মুখোমুখি
দাঁড়িয়ে
মারামারি
করেছ পরস্পর,
তোমাদের
ঐক্যহীন বিশৃঙ্খলা দেখে
বন্ধ
হয়ে গেছে মুক্তির দোকানের
ঝাঁপ।
কেবল
বঞ্চিত বিহ্বল বিমূঢ় জিজ্ঞাসাভরা
চোখে
প্রত্যেকে
চেয়েছ প্রত্যেকের দিকেঃ
-কেন
এমন হল?
একদা
দুর্ভিক্ষ এল
ক্ষুদার
মাহীন তাড়নায়
পাশাপাশি
ঘেঁষাঘেঁষি সবাই দাঁড়ালে
একই লাইনে
ইতর-ভদ্র, হিন্দু
আর মুসলমান
একই
বাতাসে নিলে
নিঃশ্বাস।
চাল, চিনি, কয়লা, কেরোসিন?
এ
সব দুষ্প্রাপ্য জিনিসের জন্য
চাই লাইন।
কিন্তু
বুঝলে না মুক্তিও দুর্লভ আর
দুর্মূল্য,
তারো
জন্যে চাই চল্লিশ কোটির
দীর্ঘ, অবিচ্ছিন্ন
এক লাইন।
মূর্খ
তোমরা
লাইন
দিলেঃ কিন্তু মুক্তির বদলে
কিনলে মৃত্যু,
রক্তয়ের
বদলে পেলে প্রবঞ্চনা।
ইতিমধ্যে
তোমাদের বিবদমান বিশৃঙ্খল
ভিড়ে
মুক্তি
উঁকি দিয়ে গেছে বহুবার।
লাইনে
দাঁড়ানো আয়ত্ত করেছে
যারা,
সোভিয়েট, পোল্যান্ড, ফ্রান্স
রক্তমূল্যে
তারা কিনে নিয়ে গেল তাদের
মুক্তি
সর্ব
প্রথম এই পৃথিবীর দোকান
থেকে।
এখনো
এই লাইনে অনেকে প্রতীক্ষমান,
প্রার্থী
অনেক; কিন্তু
পরিমিত মুক্তি।
হয়তো
এই বিশ্বব্যাপী লাইনের শেষে
এখনো
তোমাদের স্থান হতে পারে-
এ
কথা ঘোষণা ক'রে
দাও তোমাদের দেশময়
প্রতিবেশীর
কাছে।
তারপর
নিঃশব্দে দাঁড়াও এ লাইনে
প্রতিজ্ঞা
আর
প্রতীক্ষা নিয়ে
হাতের
মুঠোয় তৈরী রেখে প্রত্যেকের
প্রাণ।
আমি
ইতিহাস, আমার
কথাটা একবার ভেবে দেখো,
মনে
রেখো, দেরি
হয়ে গেছে, অনেক
অনেক দেরি।
আর
মনে ক'রো
আকাশে আছে এক ধ্রুব নক্ষত্র,
নদীর
ধারায় আছে গতির নির্দেশ,
অরণ্যের
মর্মরধ্বনিতে আছে আন্দোলনের
ভাষা,
আর
আছে পৃথিবীর চিরকালের আবর্তন।।
মীমাংসা
আজকে
হঠাৎ সাত-সমুদ্র
তের-নদী
পার
হতে সাধ জাগে মনে, হায়
তবু যদি
পক্ষপাতের
বালাই না নিয়ে পক্ষীরাজ
প্রস্রবণের
মতো এসে যেত হঠাৎ আজ-
তাহলে
না হয় আকাশ বিহার হত সফল,
টুকরো
মেঘেরা যেতে যেতে ছুঁয়ে যেত
কপোল।
আর
আমি বুঝি দৈত্যদলনে সাগর
পার
হতাম; যেখানে
দানবের দায়ে সব আঁধার।
মত্ত
যেখানে দৈত্যে দৈত্যে বিবাদ
ভারি;
হানাহানি
নিয়ে সুন্দরী এক রাজকুমারী।
(রাজকন্যার
লোভ নেই, -লোভ
অলঙ্কারে,
দৈত্যেরা
শুধু বিবস্ত্রা ক'রে
চায় তাহারে।)
আমি
একজন লুপ্তগর্ব রাজার তনয়
এত
অন্যায় সহ্য করব কোনোমতে
নয়-
তাই
আমি যেতে চাই সেখানেই যেখানে
পীড়ন,
যেখানে
ঝল্সে উঠবে আমার অসির
কিরণ।
ভাঙাচোরা
এক তলোয়ার আছে,
(নয় দু'ধারী)
তাও
হ'ত
তবে পক্ষীরাজেরই অভাব ভারি।
তাই
ভাবি আজ, তবে
আমি খুঁজে নেব কৌপীন
নেব
কয়েকটা বেছে জানা জানা বুলি
সৌখিন।