শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২০

বিশেষ প্রবন্ধঃ পূর্ণেন্দু পত্রী ৷৷ পিকাসোর কবিতা

মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন।।সংখ্যা ২।। ১৫ আগষ্ট, ২০২০


পূর্ণেন্দু পত্রী ৷৷ পিকাসোর কবিতা

ঘনিষ্ঠ এবং প্রাজ্ঞ বান্ধবী ডোরা মার-এর মন্তব্যকে নিঃসংশয়ে মেনে নিই যদি, পিকাসোর বিস্ফোরক প্রতিভার ক্রমাগত উত্তরণের পিছনে সবচেয়ে দৃঢ়মূল প্রভাবের অথবা প্রেরণাদাতার সংবাদটি জানা হয়ে যায় আমাদের৷ আর এই জানার মুহূর্তে আমাদের ভ্রূপল্লব জুড়ে জেগে ওঠে এক শিহরিত জিজ্ঞাসা,শিল্পীর জীবনে পথপ্রদর্শকের প্রধান ভূমিকা তা হলে কবির? ডোরা মার অবশ্য শুধু কবি-র উল্লেখেই থামেননি৷ পিকাসোর সমগ্র জীবন অথবা সৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রিত করেছে যে পাঁচটি বিষয়,কবিকে শীর্ষস্থানে বসিয়ে, বাকি চারটিকে আমাদের গোচরে এনেছেন এইভাবে--- ২৷ বন্ধু-বান্ধব ৩৷ মহিলা ৪৷ বাড়িঘর ৫৷ কুকুর৷
ডোরা মার, ইচ্ছে করলে, এই তালিকাকে সংক্ষিপ্ত করতে পারতেন অনায়াসেই৷ কবি এবং বন্ধু-বান্ধব এই দুটি বিষয়কে বিচ্ছিন্নতার দূরত্ব ভেঙে গায়ে গায়ে জুড়ে দিতেন যদি, সত্যের অপলাপ হত কি সত্যিই? পিকাসোর জীবনের শ্রেষ্ঠ এবং সজীব বন্ধু-বান্ধবের দিকে তাকাই যদি, সবচেয়ে উজ্জ্বলতম মুখগুলিই তো কবির৷ আর আত্মবিকাশের প্রথম প্রহর থেকেই কবিতার সঙ্গে তাঁর সজাগ আত্মীয়তার সংবাদও এখন আর অজানা নয় আমাদের৷ শিল্পী হিসেবে ছাপা-কাগজের মারফত তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশ কবিতার অলঙ্করণের সূত্রেই৷ ১৯০০-এর জুলাইয়ের ‘ইউথ’ পত্রিকায় জাঁ ওলিডা রিজম্যানের ‘দা কল অব দা ভার্জিন’ নামের সিমবলিস্ট কবিতার চিত্রায়ণই তাঁর প্রথম মুদ্রিত ছবি৷ পরের মাসে ঐ কবিরই ‘টু বি অর নট টু বি’-র চিত্রায়ণ৷ পরের অধ্যায়, প্রথমবারের প্যারিস-ভ্রমণের পর মাদ্রিদে এসে, বার্সেলোনার পুরনো বন্ধু ফ্রান্সিসকো দ্য আশিশ সোলার-কে পেয়ে গিয়ে দুজনে মিলে বের করলেন এক নতুন পত্রিকা ‘ইয়ং আর্ট’৷ ফ্রান্সিককো মেজাজে সন্ত্রাসবাদী৷ কাগজের পাতাগুলো তাই ঠাসা থাকত উত্তেজক রচনায়৷ পিকাসো সে-সব লেখার গায়ে পরিয়ে দিতেন ছবির সাজ-পোশাক৷ এই ভাবে শুরু৷ আর জীবনের শেষ রক্তিম পর্বে অজস্র কবিতা-গ্রন্থের চিত্রায়ণ৷ ত্রিস্তান জারা, পিয়ের রেভার্দি, মঁলাক, এমি সেজারে ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় এক ডজনের মতো কবিতার বইয়ের পাতা ভরিয়ে দিলেন রেখায়, রঙে, অক্ষরে৷ আর এই বারো আনার মধ্যেই রয়ে গেছে সবচেয়ে প্রিয়তম বন্ধুর কবিতার বইখানাও,অর্থাৎ পল এলুয়ারের৷ জীবনের উত্থানপর্বে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে আপোলিনেয়ারের ভূমিকা ছিল যেমন দায়িত্ববান, জীবনের এবং চেতনার সংঘর্ষসঙ্কুল নব-জাগরণের পর্বে বন্ধু হিসেবে ঠিক তেমনই প্রেরণাময় ভূমিকা এলুয়ারের৷
এই সংক্ষিপ্ত পটভূমিকার সামনে দাঁড়িয়ে আমরা এখন তাকাতে চাইছি পিকাসোর কবিতার দিকে৷ পিকাসোর কবিতা? অনেক ওষ্ঠেই ধনুকের মতো বাঁকা হাসি ফুটে উঠবে হয়তো-বা৷ রবীন্দ্রনাথের শেষ বয়সের ছবি সম্পর্কে আমাদের অর্ধশিক্ষিত মানসিকতায় যেমন অনুকম্পা-মেশানো এক ধরনের অবুঝ এবং অবিশ্বাস মেশানো শ্রদ্ধা,পিকাসো-রচিত কবিতা সম্পর্কেও তেমন সংশয়৷ যদি এই মুহূর্তে আমাদের বোধবুদ্ধির জগতে আগাছার জঙ্গল গজিয়ে ওঠে যদি,অবশ্যই দ্বিতীয়বার করাঘাত হানব না কপালে৷ বরং অপেক্ষা করব সময়ের এই অট্টহাসির জন্যে,যার ঝাপটে অনেক সযত্ন-লালিত ভ্রান্ত-ধ্যান-ধারণার স্থাপত্যও একদিন লুটিয়ে পড়ে ধূলিকণার দিকে৷ বরং প্রতিভাবানের সঙ্গে বহু ঝুরি বটের উপমাকে মনে রেখেই আমরা অনুসন্ধিৎসু হব সেই উৎসের অনুসন্ধানে,পিকাসোর আজীবনের প্রধান অন্বিষ্ট শিল্পকলার মুক্তির সঙ্গে,ঠিক কী ভাবে,কোন্ উদ্ধারহীন সংকটের চাপে,অঙ্গীভূত হতে চেয়েছিল তাঁর ভাষাশিল্পও৷ প্রথম নিভৃত উন্মীলন ১৯২৫-এ৷ গত তিরিশ বছরের জীবনে সে এক ব্যতিক্রমের বছরও৷ গ্রীষ্মে রয়ে গেছেন প্যারিসে৷ তার আগেই ওলগার সঙ্গে চিরবিচ্ছেদ৷ জীবনকে এফোঁড়-ওফোঁড় করা শূন্যতা৷ চোখ থেকে মুছে গেছে রঙ৷ হাত থেকে খসে পড়েছে তুলি৷ একাকিত্বের সেই চরম লগ্ণই একদিন তাঁর হাতে তুলে দিল কলম৷ আর তখুনিই পকেটের ছোট্ট নোটবইটার পাতাগুলো ভরে গেল ‘সুররিয়্যালিস্টিক’ কবিতায়৷ চিঠি লিখলেন বাল্যবন্ধু সাবার্তেকে,বড় নিঃসঙ্গ, চলে এসো৷ ছুটে এলেন সাবার্তে, পিকাসোর পরবর্তী জীবনের একই সঙ্গে বন্ধু,সেক্রেটারি এবং দিনরাত্রির সজাগ প্রহরীর ভূমিকা পালনের দায়িত্বে৷ সাবার্তেকে দেখালেন সেসব কবিতা৷ উৎসাহিত সাবার্তের অনুরোধে ডাক পড়ল বন্ধুদের৷ মূলত স্প্যানিসে লেখা কবিতা ফরাসীতে অনুবাদ করেই পড়ে শোনালেন পিকাসো৷ বন্ধুদের মধ্যে যারা ‘সুররিয়্যালিস্ট’, অভিনন্দন জানাল সেই ব্যাকরণ-না-মানা, স্বতস্ফূর্ত, অববেতনার ফসলকে৷ ক-দিন পরে তারই একগুচ্ছ ছেপে বেরল ‘কাহিয়ের দু আট’ নামের বিখ্যাত পত্রিকায়, আদ্রে ব্রেতোর অভিভূত ভূমিকাসহ৷
পিকাসোর কলমে কবিতার এই আকস্মিক উদ্গীরণকে নিতান্তই সাময়িক বিরহ-তাপের অকিঞ্চিৎকর পরিণাম হিসেবে ভেবে নিয়ে উদাসীনতার হাসি হাসতে পারত ইতিহাস এবং আমাদেরও পরিহাসমুখর কলকণ্ঠ জুড়ে যেতে পারত সেই সঙ্গে৷ কিন্তু দু-বছর পরেই সিভিল ওয়ার-এর যুদ্ধ-বাদ্যে যখন ঝংকৃত জন্মভূমি স্পেনের জল-স্থল,ফ্যাসিস্ট ফ্রাঙ্কোর নখ-দাঁত রিপাবলিকানদের নিশ্চিহ্ণ করার জন্যে যখন বর্বরের মতো ব্যস্ত, আর পিকাসো যখন স্বদেশের সেই রক্ত-রণের সংগ্রামে রিপাবলিকান শক্তিকে আর্থিক সাহায্যের জন্যে হাত দিয়েছেন ১৮টা এচিং-এর সেই অ্যালবামে, যার নাম ‘ফ্রাকোঁর স্বপ্ণ এবং মিথ্যাচার’,যখন চিত্রকথাকে যুদ্ধের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ঘোষণা করার মতো দুঃসাহসে তিনি দৃপ্ত, সেই বিপজ্জনক সংকটের মুহূর্তেও আমরা দেখতে পেলাম যে কবিতা অপরিহার্য হয়ে উঠল তাঁর পক্ষে আপন বক্তব্য প্রকাশের গরজে,অথবা আরো গভীর অর্থে অন্তর্গত সত্তার সচেতন আকুতিকে ভাষায় মুক্তিদানের দায়িত্বে৷ ১৮টি এচিং-সংবলিত ঐ অ্যালবামের পাতাতেই নিজের হাতে খোদিত হল স্বরচিত কবিতা, যা মূলত ঘৃণ্য এক পাশবিক শক্তির বিরুদ্ধে তাঁর নিজস্ব সুররিয়্যালিষ্টিক ধরনের ধিক্কার৷ কবিতা এখন তাঁর কাছে আর স্বতন্ত্র একটা মাধ্যম নয়, হয়ে উঠেছে শিল্পকলারই পরিপূরক৷ যে-কথা রঙে বলা যায় না, তাকেই তিনি ব্যক্ত করতে চান ভাষায় অথবা অক্ষরে৷ এখন অনায়াসে উচ্চারণ করা যায় যে কবিতা তাঁর কাছে হয়ে উঠেছে‘writing picture’ আর ছবি‘painting poems’৷ সাবার্তের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় ভাষাকে কী ভাবে চিত্রের সহোদর হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন তিনি৷ সাবার্তে একদিন যখন লাঞ্চের আয়োজনে টেবিলের উপরে ঝুঁকে, পাশের ঘর থেকে বেরিয়েছেন পিকাসো বলে উঠতেন---‘দেখ,দেখ,তোমার পোর্ট্রেট’৷ সাবার্তে ঘাড় ঘুরিয়ে যা দেখলেন তা কাগজের উপর কালিতুলিতে আঁকা কোনো মুখাবয়ব নয়,কাগজের উপর পেনসিলে লেখা একটি কবিতা৷
এই দৃষ্টান্ত থেকেও যদি কোনো কোনো সংশয়বিলাসীর মুখে উচ্চারিত হয় যে কবিতা এখানে ক্রীড়া-কৌতুকের চেয়ে অতিরিক্ত নয় কিছু,অথবা তাঁর কবিতার প্রসঙ্গে আদ্রে ব্রেতোর‘‘We learn from this the necessity of a total expression by which he is possessed and which compels him to remedy in its essence the relative insufficiency of one art in relation to another’--- এই উক্তিও তাত্ত্বিকতা হিসাবে যতটা গ্রহণীয়, পিকাসোর কবিতার ব্যাখা হিসেবে গুরুত্বময় নয় ততটা, তখন আমাদের পেরিয়ে আসতে হবে পিকাসোর জীবনের আরো চারটে বছর৷
১৯৪১৷ ১৪ জানুয়ারি৷ কনকনে শীতের সন্ধে৷
পিকাসো হাতে তুলে নিলেন পুরনো একটা এক্সারসাইজ খাতা৷ তারপর একটানা লিখে চললেন একটা নাটক, যাকে ভাবা যেতে পারে দুভাবেই,‘tragic farce’ অথবা‘fercial tragedy’৷ ১৭ জানুআরি পূর্ণচ্ছেদ পড়ল সে নাটকে৷ ১৯৪৪৷ নাৎসী-অধ্যুষিত প্যারিসে যে-কোনো সাংসৃকতিক ভাবনার সমাবেশ যেখানে নিষিদ্ধ এবং বিপজ্জনক, প্রতিবেশী মাইকেল লেরিস-এর কক্ষে গোপনে সংগঠিত হল পিকাসো রচিত নাটক পাঠের আসর৷ অভিনয়ের আসরও আখ্যা দেওয়া যায় অনায়াসে৷ কারণ নাটকের চরিত্রগুলো ভাগ হয়ে গিয়েছিল একক কণ্ঠের পরিবর্তে বিভিন্ন কণ্ঠস্বরে৷ ‘বিগ ফুট’-এর ভূমিকায় স্বয়ং লেরিস৷ অন্যান্য চরিত্রে লেরিসের স্ত্রী, জাঁ পল সার্ত্রে, সিমন দ্য বোভোয়ার, রেমণ্ড ক্যুয়েনুঁ, ডোরা মার প্রমুখেরা৷ কামু প্রযোজক৷ সেদিন রাত্রে পরাভূত প্যারিসের বুদ্ধিজীবী মহলে যেন মুক্তির এক নতুন স্বাদ৷ যেন এক বিজয়-উৎসব নাৎসী-চক্রান্তের বিরুদ্ধে৷ সার্ত্রের কলমে এই অভিজ্ঞতার বর্ণনা---‘‘Never has our freedom been greater than under the German occupation since the Naz poison filtered even into our minds, every just thought was a victory; since the omnipotent police tried to force us to silence, every word became as precious as a declaration of principle; since we were at bay, our very gestures had the weight of vows.’’
১৯৫০৷ কোরিয়ায় সাম্যবাদের বিরুদ্ধে ধনবাদী শক্তির যুদ্ধঘোষণা৷ যে-কোনো যুদ্ধের সংবাদেই পিকাসোর এক চোখে যখন ভারাক্রান্ত বিষাদ,অন্য চোখে তখন জ্বলজ্বলে ঘৃণা৷ ১৯৩৭-এ বর্বরতার বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ এঁকেছিলেন ‘গের্নিকা’-,সেই প্রতিবাদেরই আরেক রূপ ফুটিয়ে তুললেন ‘ম্যাসাকার ইন কোরিয়া’-! এরপরেই ‘ওয়্যর অ্যাণ্ড পিস’-এর জন্যে প্রস্তুতি৷ আর ঠিক যেমন ঘটতে দেখা গেছে রবীন্দ্রনাথের বেলায়, বৃহৎ কোনো সৃষ্টির অব্যবহিত পরেই হাত ছোঁয়াচ্ছেন বিপরতীধর্মী হালকা চালের রচনায়, পিকাসোও তেমনি যুদ্ধ এবং শান্তির ব্যাপ্ত বিশাল পটভূমিকার পাশাপাশি এঁকে চলেছেন বালিকাদের নাচের সিরিজ৷ আর তারই সঙ্গে তাল রেখে চলেছে নতুন নাটকের খসড়া৷ প্রথম নাটকের মতো বিমূর্ত নয় এটা,মোড়া নয় রূপকের মোড়কে অথবা ব্যক্তিগত অনুষঙ্গের গোপন রহস্যে৷ ‘দি ফোর লিটল গার্ল’---যেন লিরিকের তোড়া৷ ১৯৪৭-এ সূত্রপাত৷ প্রথম নাটকের মতো একটানা চবিবশ ঘণ্টায় শেষ নয়,দীর্ঘ কয়েকমাসের মনোযোগী অধ্যবসায়ে সমাপ্ত৷
প্রথম নাটকে পিকাসো ছিলেন আড়ালে৷ নিজেকে গোপন রেখেই তিনি ফোটাতে চেয়েছিলেন জার্মান অধিকৃত প্যারিস-জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা আর সেই অন্ধকার সময়ের বিরুদ্ধে তাঁর ঠাট্টা-বিদ্রূপ৷ দ্বিতীয় নাটকে অনেক বেশি সামনে এলেন নাট্যকার৷ সংলাপে-সংলাপে ছিটিয়ে দিলেন সেই সব রঙ যা এতকাল সমৃদ্ধ করেছে তাঁর চিত্রকলাকেই৷ তিনি শোনালেন এমন নীলের কথা, যার গা থেকে নির্গত হয় হলুদ এবং নীল এবং লালেরও আভা৷ তাঁর এই দ্বিতীয় নাটকের বালিকাদের মুখে তিনি ভরে দিলেন এমন সব সংলাপ যার উপরতলায় শিশু-মনের অবাধ অসংলগ্ণতা,ভিতর-মহলে জীবনমৃত্যু সম্পর্কে পিকাসোর নিজস্ব দর্শন৷ দ্বিধাগ্রস্তের বিহ্বলতা কাটিয়ে এতক্ষণে আমরা নিশ্চয়ই পৌঁছে গেছি সিদ্ধান্তের সেই স্থিরতর ভিত্তি-ভূমিতে, যেখানে দাঁড়িয়ে সহজেই উচ্চারণ করা সম্ভব যে, পিকাসোর ছবি যেমন তাঁর কবিতা, কবিতাও তেমনি তাঁর ছবি৷
নিচের তিনটি ছোট্ট মাপের কবিতায় এই দুই পিকাসোর সঙ্গেই সাক্ষাৎকার ঘটবে আমাদের৷

শৈশবের ভিতর ঢুকে পড়ো এই সময়ে যখন সাদা স্মৃতির চারপাশে নীল বর্ডার তার চোখের মধ্যে ধপ্ধপে সাদা আর রুপোর ভিতরের ইণ্ডিগোর টুকরো চাউনিগুলো সাদা কোবাল্ট ডিঙিয়ে যায় সাদা কাগজ যাকে চিরে যায় নীল কালি নীলচে-কে ভাগিয়ে উঠে দাঁড়ায় আলটারমেরিন যাতে সাদা ঘুমিয়ে নিতে পারে বিপর্যস্ত নীলে গাঢ় সবুজের দেওয়ালে যা নিজের খুশীকে লিখে যায় বৃষ্টিতে পরিচ্ছন্ন সবুজ যা সাঁতার কাটে সবুজ-হলুদ ধোয়া-মোছা বিস্মৃতির ভিতরে তার সবুজ পায়ের নিচে বালিতে পৃথিবীর দুপুরবেলায় বালি পৃথিবীর গান বালি পৃথিবী

এক কোণে একটা ভায়োলেট জাগ ঘণ্টাগুলো কাগজের কত রকম ভাঁজ ধাতুর ভেড়া কাগজ থেকে বেরিয়ে আসা জীবন একটা রাইফেল গুলি ছোঁড়ে কাগজ সাদা ছায়ায় ক্যানারি পাখিরা বৃত্তাকারে প্রায় গোলাপী একটা নদী সাদা চরাচরে রঙের স্বচ্ছ নীল ছায়ায় লাইলাক ছায়ার প্রান্তে ছায়ায় তৈরি একটা হাত হাতে গোলাপী রঙের ঘাসফড়িং মাথা উঁচু করে একটা শিকড় একটা পেরেক গাছের সার আর কিছু নেই যাদের একটা মাছ একটা খাঁচা৷ অগ্ণিতাপ গা-ভরা আলোয় তাকায় একটা সান-শেডের দিকে আলো আলোর ভিতরে আঙুল কাগজের সাদা সূর্য সাদার উপরে এঁকেছে ছায়াময় চোখের দীপ্তি সূর্যের আলো খুবই সাদা রঙের সূর্য প্রচণ্ড সাদা সূর্য

গোপনে
শান্ত হও কিছু বলো
রাস্তাঘাট ছাড়া সব কিছুই ভরবে নক্ষত্রে
আর কয়েদীরা খায় পায়রা
আর পায়রাগুলো খায় চীজ
আর চীজগুলো খায় কথা
আর কথাগুলো খায় ব্রীজ
আর ব্রীজগুলো খায় দৃষ্টি
আর দৃষ্টিরা খায় পেয়ালা-ভর্তি চুম্বন
যা নিজের ডানায় লুকোয় সব কিছু
প্রজাপতি রাত্রি
গত গ্রীষ্মে এক কাফেতে
বার্সেলোনায়৷

পূর্ণেন্দু পত্রীর প্রবন্ধগ্রন্থ ‘ছবি, কবি, কবিতা’ (১৯৯২, প্রমা প্রকাশনী) থেকে পুনর্মুদ্রিত


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন