মাসিক কবিতাপত্র অনলাইন ।। সংখ্যা ৬।। ০৬ অক্টোবর, ২০২০
ইন্দ্রজিৎ রায় ।। ফালতু ডায়রি , বৈশাখ , বিশেবিষ
( পূর্বপ্রকাশিতের পর )
বাপুজিনগর , সুলেখা এইসব অঞ্চলের গলিগুলোর উষ্ণ জ্যামিতি নিশ্চই মফস্বলের চোখে একটি দেজা ভ্যু সৃষ্টি করে তখন , কালোসুতোর দেবেন বিড়ি অথবা খাটালের বুড়িয়াজী , বুধু বলে একটি সুররিয়াল্ চরিত্র , এগুলো যেন পুরুলিয়ার মুনসেফডাঙা , নামোপাড়ার প্রতিরূপ ,অবশ্য গাড়িঘোড়ার ব্যপারটা হয়ত মেরেকেটে তিনভাগের এক ভাগ । কিন্তু রাস্তা , আলোছায়া বস্তুত একই , সত্যি বলতে কি আজকাল এটা অসুখে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে , মনে হচ্ছে দুনিয়ার ভেতর দিয়ে যেন একটাই রাস্তা গেছে ,পালটে পালটে । রাস্তাগুলো তোমার চেনা । এটাই । উচ্ছসিত , অবাক হবার অপটু অভিনয় করতে থাকবো ।
আমার ভাষা ও সাহিত্যের বন্ধুদের কাছে একটা শব্দ শুনতাম personification ...আরো নানারকম । বোঝার চেষ্টা করতাম কী ব্যাপারটা । বিষ অন্ন , বিশাদ ছিলো খিড়কির দরজাটা ।ওতে প্রবেশ করে , অনেকবছর পরে একদিন মেঝেতে শুয়ে চোখ লেগে গেছিলো একদিন , চোখ খোলার পর , আড়াআড়ি পাঁচটা কুড়ির আকাশটি দেখলাম কাদায় পিছলে বলের সঙ্গে উড়ে যাচ্ছে , কাৎ হয়ে । অথবা কাউবয় ছবির মত ঘোড়াশুদ্ধু পড়ে যাচ্ছে , মাঝখানে কিছু metaphysics ঢুকে পড়ে , ঘোড়ার মত সেদিন , শিংঘেরা হরিণের মতও হয়ত বা , নিজের হাইপার মস্তিষ্ক নিয়ে , কস্তুরির সম্ভাবনার পাশে ঘুমিয়ে পড়লো । সুনীলবাবুর পাম্প , হাইওয়ের ধারে । যেন কতবছর ঘুমোয়নি । ঘুমের মধ্যে ঘুণ । হাত বাড়ালে ,ঠান্ডা ধাতুতে লাগে , এই আলমারি , সাবেক , পিঠোপিঠি ভাইবোন , একদিন অনেক লম্বা ছিলো আমার থেকে , অন্যদিন সে প্রায় মাথায় মাথায় । আজও ,এতবছর মা হোলো শরীর ছেড়েছেন , আলমারিতে এখন অন্যদের জিনিষই বেশী , তবু এই আলমারিটার সামনে , মেঝেতে শুলে চোখ বুজে আসে , চেনা লাগে । এটাই । দুর্বল চোখ , দুর্বতলতর শ্রবণ আমাদের কিন্তু স্মৃতির শীতলকুচি থালায় রক্তের ছিটে , মাঝখানে হনুমান মন্দির ঢুকে আসে , অথবা বিপজ্জনক বাড়ির নিচে কালিকা মিষ্টান্ন ভান্ডার । এসময়ে কলকাতায় চলে আসার পর , যে দু একবার পুরুলিয়া ফিরেছি , একটাই গান বাজতো , একে একে নিভিছে দেউটি ই ই ...জমি বেশি মানুষ কম , এই যে আসমানি জ্যামিতির পাঠ , এও এক অধ্যায় । একটি পংক্তি খুঁজে পাই , কখনও একটি ছবি । তার সঙ্গে মিশে যায় সেই রাস্তাটা , একই রাস্তা যা দুনিয়া ভেদ করে গেছে , ধুলোয় গড়াগড়ি করতে থাকে শরতের বিষ ।
প্রেস , কালির গন্ধ এসব ততদিনে গা সয়ে গেছে , যেমন দাদু এবং গহন শৈশবের অপসারণটাও । মানে সয়ে গেছে যে এটা নিজেকে হয়ত আমিই বোঝাচ্ছি , এও হতে পারে । চাকরি , মাইনে পাওয়া , কারণ এর আগে কেউই আমাকে মাসমাইনে দেয়নি , আগের দিন বলছিলাম , মা টাকা হাতে দেয়া পছন্দ করতেন না । ফলে যাকে বলে financial acumen , সেটা আমার অনেক দেরিতে গজায় । ততদিনে আমার সঙ্গীরা পাকাপোক্ত খেলোয়াড় , পকেটে মানিব্যাগ রুমাল ছাড়া তো ভদ্র পুরুষ অকল্পনীয় ,তা আমার ভদ্রপুরুষ হয়ে ওঠার দাবি ওখানেই নস্যাত হয়ে যায় । তাই আমি দ্বিতিয় তৃতীয় পংক্তিতে দাঁড়াতেই পোক্ত । সেই কবে থেকেই ।
বাপুজিনগরের ভেতরের সরু চওড়া গলিগুলো দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে পেছনের দিকের পাড়াগুলোতেও ক্রমশ যোজিত হতে থাকি , মধুক্ষরা মিষ্টির দোকান এবং ক্রমশ রাণিকুঠি যাবার পথে বারোভুত অথবা দ্বাদশ অবতারের মেলা আমাকে গ্রাস করে ফেলে , এতটাই , যে আমার পরবর্তীর অনেক অনেক গাঁট থেকে যায় , এখানে , সেটা অন্য প্রসঙ্গ । তবে এই এলাকা অনন্য স্মৃতির সঙ্গে কিছু মানুষ জড়িয়ে আছেন , থাকবেনও । তারা বন্ধু , অগ্রজপ্রতিম কখনও অটোচালক । তাঁদের নাম নিয়ে অকারণ ভারি করতে চাই না , তবে আজ হঠাৎই তাপস , কবি তাপস দততো কে না বললে এই লেখাটি কোথাও সুর হারাবে , প্রয়োজনীয়তাও কিছুটা , তখন তাপস লিখছে look through an ugly glass , না এই শিরোনামটা বাংলাতেই ছিলো মূল কবিতাটিতে , মনে পড়ছে ধারাপাত , মনে পড়ছে সাহিত্য তৃষা এমন অনেক অনেক , সেই বিজ্ঞাপনের মত , এ স্বাদের ভাগ হবে না , সুমন রায় এবং উলটো গণেশ , এ বলে শেষ হবে না । বারোভুতের মেলা আমার পুরুলিয়ার রাসমেলা হারানোর কষ্ট লাঘব করে কিছুটা , এই মেলার মাঠ , গহিন কলোনি অঞ্চল ও তার নানান জরির কাজ আমার জগতে ভরে ওঠে , লালকা পাড়ার বর্ষাঘেরা ঘন গাছালি আমার নগরবাসের ক্লেদ মুছে দিতো , অনেকটা , এমন অনেক দিন হয়েছে , আজও হয় , সম্পুর্ণ উদ্দেশ্যহীন , রিজেন্ট এস্টেটের ভেতরের রাস্তাগুলোতে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি , পায়ে পায়ে চেনা মানুষ , চেনা হঠাৎ এক ছোট্ট ঘুর্ণী বাতাস । কটা শুকনো পাতা , বিড়ির খালি প্যাকেট , কয়েকপাক ঘুরে , আবার সব স্থির । আমার ঠাকুরমার চেহারায় সারদা মা'র আদল ছিলো , বাবাকে মেলা থেকে সারদা মা'র ছবি দিয়ে বলেছিলাম , রেখে দাও , বাবা অনেক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন ছবিটার দিকে , যেভাবে জীবনে প্রথম চাকরির মাইনে পেয়ে উল্টেপাল্টে দেখেছিলাম অনেক্ষণ । বুক ভেঙ্গে কান্না পেয়েছিলো ।জানিনা কেন ।সবাই তো খুশি হন শুনেছি । বুঝেছিলাম , মা কেন চাইতো না আমাকে কেউ টাকা হাতে দিক । হস্তি মা ছিলেন তো , আগলে রাখতে চাইতেন । ধম্মপদ গ্রন্থে যেমন , বুদ্ধ বলছেন হস্তি সম ,একাকী সঞ্চর - মা ও খুব একা ছিলেন । খুব । সবার মাঝে থেকেও ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন