মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০২০

প্রবীর দাশগুপ্ত ।। কয়েকটি কবিতা

মাসিক কবিতাপত্র অনলাইন ।। সংখ্যা ৬।। ০৬ অক্টোবর, ২০২০


প্রবীর দাশগুপ্ত ।। কয়েকটি কবিতা


পিন্তানিনা সান্তামারি

নাও না আমাকে নাও
বাতাবির ফল প’ড়ে-থাকা মাঠ,নেবে না আমাকে?
আমার তো দেশ নেই ঘর ও বাড়ির মতো কিছু নেই শুধু
ঘোড়ার মাংস বেচে তিনটি মোহর পাই রোজ ভোরবেলা
তখন দিনের শুরু- এককালে খনি ছিল গভভ ফুঁড়ে
জেগে ওঠা জল- পাথরে কামিজ রেখে, ইজের শুদ্ধু খুলে
কতক্ষণ ডুবে থাকি তারপর সেরে উঠে দেখি যে আলোর বন্যা
নীল আলপিন কাঁধে প্রথম চাষীরা যাচ্ছে পুবের জমিতে
রাত্তিরের ভুতো ভয়,সাপখোপ,হিশিমাখা বিছানার
সংস্রব ত্যাগ করে একটি খুকুও জাগল,
চোখের পিচুটি ধুয়ে এইবার সুকলে যাবে-
ওদিকে কাঁকর রাস্তা টেনিসের কোর্ট পাশে ফেলে
একটি সাইকেল আসছে,সামনে জোতা পাঁউরুটির ভ্যান
আর আসছে পোস্টম্যান,হাতের তালুতে তার চিঠি নয়,
এক সেণ্ট মাত্র দাম ব্রিটিশ গায়নার সেই মহামূল্য স্ট্যাম্প
কিন্তু কাঁদছে সে
 
কিছু না হারিয়ে তুমি কাউকে কিচ্ছু দেবে
সেও খুব ভুল দেওয়া
এ-রকম ভুল থেকে উদ্ধারের উপায় হিসেবে
রেটিনার পাত্রব্যাপী লোহা ও তামাক মেশা জল
যথাযথ যেতে চেয়ে যে-মানুষ চ’লে যায়
ভিন্ন শহরে গ্রামে,ঘাসের উপরে তার
মশলার ট্রাক থেকে ঝুঁকে দেখে ড্রাইভার
পিঁপড়ের নিয়মিত গতি আর সে-অলসলোকে
না-জানি ফুলের নৌকা বেয়ে আসে কোন ওফেলিয়া
তুলে নেয় পিন্তানিনা সান্তামারি জাহাজের নাবিকের শব
তখন তো-তখন তো দুপুরের ভীষণ সূর্যের নিচে
যতদূর চোখ চলে ততদূর লাটে তুলে দিয়ে
আমিও হেলায় ছুঁড়ি পর্যটক পাখিদের ডিম
পিজারোর বাহিনীর সাথে এই দেশে এসে
সমস্ত হত্যার সাক্ষী,আমিই আদেশদাতা
পিতৃনাম বালভার্দি,পেশায় যাজক
যদিও প্রাচীন ধর্মে,লোকাচারে,নদী গুহা পাথরের
পুজোর বেদিতে আর রাঙা চোখে-চোখে উন্মাদ সমুদ্রগাথা
এই-সে খানকি মাগি,কর্ষণ চিহেণর কাছে
ইনকা লাঙলখানি জেগে আছে জেগেছে প্রমেহ রোগ
শ্বেতপ্রদরের মতো মানুষের ধাতু-দিগ্বিজয়
এবং হে ক্যারাভান আমার কেচ্ছাগুলি
সর্বত্র-ই র’টে গেছে, জেনেছে প্রকৃত বন্ধু
বন্ধুর পরিজন- এইরূপে বিশ্বময়
দড়ির গিঁটের লিপি সমূহ নাবিক চিঠি আর নীল কবিতার
সানুদেশে, রুটির পুঁটুলি নিয়ে চ’লে গেল চাষীদের ছেলে
পায়ের আঙুলে গেঁথে উঠছে গমের বীজ,
ইঁদুরের ত্রস্ত দৌড়, দ্রুত সন্ধে নেমে এসে
এই দৃশ্য ঢেকে দিলে, এবার আক্রোশবশে
চাষীর ছেলেটি হ’য়ে অন্ধকারে দিদিমার
খসখসে হাত টেনে নোবো,
কোথাও যাওয়ার কোনো কথা নেই
ভ্রমণ কাহিনীগুলি নেশা
সে-মানুষ চ’লে গেছো ভিন্ন শহরে গ্রামে
আমি তার ফেরার কাহিনী
ওগো ওফেলিয়া
বাতাবির ফল প’ড়ে-থাকা মাঠ, ওগো
আমাকে নেবে না? 



কাননকুমারী

কাননকুমারী সেই বাউল চাতালখানি মনে করো
খ্যাপার ওষ্ঠ ধ’রে সেইসব চুমু খাওয়া রাত্রি অশালীন
শিল্প নাকি বাংলার বিবাহিত গান আমাদের কোথায় নিয়েছে
দুপুরে হোটেলঘরে ব্লাডিমেরি সয়াবীন আকন্ঠপানের পর
তোমার শরীর ছিল ভাপে সিদ্ধ আনাজের মতো
কণ্ঠনালীর খাদ তুমুল আঁকড়ে ধ’রে যেমন শোয়াতে গেছি
হঠাৎ শ্লেমার শব্দ আর বমনের ক্ষীণ বর্ণমালা সাঁতরে এলো বাতাস জরতী
আমাদের যৌনকাজ, কৃষি ও ভিক্ষাবৃত্তি, বৈশ্যের জন্ম আর 
একটেরে বসতির পাশে হলদেটে তাঁবু দেখা দিল
তিনি মৃত্যু৷ ও-রকম সাংঘাতিক শিষ্ট রীতি তাঁর
আর এই রীতি প্রণয়ের, কাননকুমারী যদি ক্ষমা করো


কিশোরীকে লেখা স্তোত্র

শ্বাসের স্থান সাম্প্রতিক ঘাম ফোঁটায় বিব্রত
যুবক ওই অঞ্চলের শাসন পেলে ব’র্তে যায়---
যদিও তার গভীর রাত মিথ্যাচার বিভ্রমের
মেয়েটি দুই আমপাতায় বিষবমির সাক্ষ্য নিক
ফিরিয়ে দেয় অসম্মান--- প্রণয়চাল ক্লান্তিহীন
করোগেটেড আর্তি চাই শালিক ডিম শালিক ডিম
শ্বাসের স্থান সাম্প্রতিক ঘাম ফোঁটায় বিব্রত
মেয়েটি হোক অসদ্ভাব আমাকে তার বর করো


একটি চেতনাপ্রবাহ

‘লতুনবাবু’ টিলার কাছে পৌঁছতেই তেষ্টা পেল খুব
বিন্দুবাসিনীর নাকি ছেলেবেলা ব’লে কিছুই ছিল না
বুড়ো টাঙাওলার মুখময় বসন্তের দাগ
খোঁপা বেঁধেছে কি মনে হয় ঘোরতর মফস্বলি তুমি
এখন অনেক রাত পুনর্বসুুদের কথা বলো
বিশপের পুলওভার চুরি ক’রে পালিয়ে এসেছি
জোট ও সম্ভোগের পর শোক নাকি শস্যের ওয়াগন
পুরোনো কলের গান : সায়গল গাইছে.... নিশীথে একেলা
ডেকে বলছে এখনো কী হাতচিঠি পাও
কাল কি মৃত্যুর কথা বলা যেত, কাল

ব্রত

যে-জন্ম আমাদের ঝাঁঝালো কেসুতপাতা মদ
তার কি অনর্থ হ’তে আছে
ঘাসের বাহান্নপথে পোকাদের হাঁটিহাঁটি গ্রাম
কেউটের এলেবেলে বিষ পড়ে থাকে
যে-ছেলেটি শান্ত আর যে-মেয়েটি আছাড়ি-পিছাড়ি
উহাদের দেখা হোক, শালিখঠাকুর---

('মাসিক কবিতাপত্র', বইমেলা ২০২০ সংখ্যা থেকে পুনঃপ্রকাশিত)


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন