মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০২০

সৌমিত বসু ।। একগুচ্ছ কবিতা

মাসিক কবিতাপত্র অনলাইন ।। সংখ্যা ৬।। ০৬ অক্টোবর, ২০২০



সৌমিত বসু ।। একগুচ্ছ কবিতা





সে



প্রায় সাতমাস পরে সে ফিরে এলো।
ফিরে এলো কারণ সে এখন ভাবছে বাকিজীবন এই গ্রামেই থেকে যাবে।
তার প্রথম বউ গলায় পরিয়ে দিয়েছে কঙ্কালের মালা
ছেলেমেয়েরা হাতে ধরিয়ে দিয়েছে
মুড়ো ঝাঁটা,টায়ারের চটি
যাতে ভর দিয়ে সে উড়ে যেতে পারে আত্মীয়স্বজনের আকাশে
দুটো ভাত পাবার আশায় আজ সে এসে দাঁড়িয়েছে নতুন বউ এর উঠোনে।


বউ তাকে দেখছে আর ভাবছে
পাড়ার আশিসকে সে আজ
কি জবাব দেবে
হাড় জিরজিরে মানুষটাকে দেখে
কান্না পাচ্ছে তার
একটা সরু সুতোর ওপর দাঁড়িয়ে
একথালা গরম ভাত
তার কাছ থেকে সরে সরে যাচ্ছে।


অহেতুক স্বপ্নের ভেতর
আজ জন্ম নিলো যে উপকথা
তোমরা কি আদৌ টের পেলে?




বনলতা সেন


আমার বৌ আমার প্রতিটি মিথ্যের ওপর বসে থাকা জলফড়িং |
আমার ডানা নড়লে তার মনের জলে ছায়া পড়ে |
তার প্রতিটি "আচ্ছা" উচ্চারণের ভেতর লুকিয়ে থাকে কতটুকু বিশ্বাস -অবিশ্বাস,
অনেক অনেকদিন আগে
সে আমাকে সবটুকু দিয়ে ভালোবাসতে চেয়েছিলো
আমি হেসে আমার অক্ষমতার কথা জানিয়েছিলাম |


ও আমার বৌ, তুমি আমার সমুদ্রের ভেতর জেগে থাকা একলা মাস্তুল
যেদিকেই উড়ে যাই ফিরে এসে তোমাতেই বসি |




লিখতে চাই বসন্তের কবিতা


বসন্তের কবিতা লিখতে বলেছো
আমি লিখি ধেয়ে আসা আতঙ্কের কথা |
তুমি চেয়েছো কবিতায় যেন
রং লেগে থাকে বসন্তের
কৃষ্ণচূড়া যেন লাল করে রাখে
আকাশের প্রতিটি কোন
প্রত্যেকের বুকের ভেতর যেন বেজে ওঠে
"বসন্ত এসে গেছে "| আনন্দ -বসন্ত |


আমি অনেক চেষ্টা করেও পারিনি |
বসন্ত বলতেই আমার সামনে ভেসে ওঠে
ইতালির রাস্তায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকা মানুষের লাশ, মা বাবা বোনের আদলে,
স্পেনের ব্যালকনিতে রেখে যাওয়া
দু লাইনের অসমাপ্ত কবিতা,
এথেন্সের ঘরে ঘরে
দেবরাজ জিউস এর আতঙ্কিত মুখ,
চাকুরীবিহীন এক অসহ্য দিন গুজরান|
ভারতবর্ষ জুড়ে মমির মতন
থমকে যাওয়া অপার জীবন
কখনো কি ফিরে পাবে পুরোনো আকাশ?




একদিন ঠিক লিখবো তোমার মনের মতো বসন্তের কবিতা
একদিন হয়তো সত্যিকারের বসন্ত এসে
চুমু খেয়ে যাবে |




হস্তান্তর


চেনাগলি দিয়ে হেঁটে আসছে
হাত ধরাধরি করা অন্ধকার ,
কতো বছর পর আপন মনে হচ্ছে তাদের |
আলোর কথা আজ থাক |
ঘাতক যেন চিনতে না পারে আমাদের |


এইসব তামাটে পাতারা সবুজ হয়ে উঠবে একদিন
ছিনিয়ে নেওয়া জলে ভাগ বসাবে সাইবেরিয়া
এতখানি আকাশ আর মানুষের অধিকারে থাকবে না কিছুতেই |


যেদিন বিষ নেমে যাবে
তুমি যেন পা টিপেও যেওনা টিলার ওপর
ওখানে যে ঘুমিয়ে আছে থাক
তার কপাল থেকে চুল সরিয়ে দিলে
সে কিন্তু ভেঙে যাবে আগের মতন |


চেনাগলি অন্ধকার ঘাতক
আর যেন ফিরে না আসে |




মায়া বৌ -- ৪০


আমার সম্পদ আমি রেখে যাই তোমার ছায়ায়
একদিন ঠিক গুনে নেবো।


বাণিজ্যে চলেছি আজ।ফিরে আসবো নৌকো সাজিয়ে।
ততদিন তাকে রেখো হাসিকান্নায়।


এই ঘর জানে, জানে সিঁড়ির প্রতিটি কোন
জানে দৈবাৎ ছাতের পাশে থমকানো হাওয়া
সে আমার কতোখানি।আমি তার কতোখানি জুড়ে।


দূরে ভাঙে বাতিঘর, আলো আজ কিছুতে দেবে না
প্রবল আকাশ থেকে মেঘ নামে থমথমে মুখে
হাত ধরাধরি করে কুয়াশারা চোখের পাতায় এসে বসে
আমি চলি।পেছনে না ফিরে আমি দৃঢ় পায়ে সামনে এগোই।


ও নগর, আমার সম্পদ আমি রেখে যাই তোমার জিম্মায়
ফিরে এসে ঠিক বুঝে নেবো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন