মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০২০

কয়েকটি কবিতা ।। সুজন ঘোষ অমিত দেশমুখ রথীন কর নিসর্গ নির্যাস মাহাতো অর্ক রায়হান অরূপ সেনগুপ্ত কাঞ্চন রায় টোকন মান্না

মাসিক কবিতাপত্র অনলাইন ।। সংখ্যা ৬।। ০৬ অক্টোবর, ২০২০


কয়েকটি কবিতা 


ছবিঃ হিরণ মিত্র 

সুজন ঘোষ ।। করোনাকালের ক্রান্তি


ভীষণ রকম বদলে গেছে সব!
আমার এ শহরে সুনসান নীরবতা
প্রশস্ত রাজপথে নেই কলরব।।

অলিতে-গলিতে নেই রিকশার শব্দ!
মিরপুর থেকে মতিঝিল,
নিজের নিঃশ্বাসেও চমকে উঠি, এমনই স্তব্ধ ।।

করোনাকালের ক্রান্তিতে মানুশের গন্ধমাখা এ শহরে,
হটাৎ থেমে যাওয়া যন্ত্রের আড়ালে,
ডেকে ওঠে এক সুকণ্ঠি পাখি, জনমানবহীন প্রান্তরে।।

এ শহরে আছে এমন পাখি জানিনি কখনও আগে !
ভীষণ ভয়ে বদলে গেছে সব, করোনাকালে;
আপাদমস্তক ভীষণ রকম নিরবতা আজ, শাহবাগে ।।



অমিত দেশমুখ ।। অঙ্ক



অচেনা মানুষ যদি ভালবাসতে চায়?
ভালোবাসা দেবো।

অচেনা মানুষ যদি ফুল ভালোবাসে?
ফুল গাছ এনে দেবো।

অচেনা মানুষ যদি সঙ্গ চায়?মুহূর্ত চায়?
সঙ্গ দেবো।ভালোবাসা দেবো।

অচেনা মানুষ যদি পুব দিকে গেলে রেগে যায়?
পুব দিকেই যাবো।


রথীন কর ।। ঝুপুস আঁধারে আমাদের


     
আমাদের অসহায় দিন
নাগরালি দিন
আমাদের শামিয়ানা রাত
হন্তারক হাত
প্রতারক সময় পেতে
রাখে বেনিয়মের ফাঁদ

হাওয়ায় হাওয়ায়
অবিশ্বাস
পাতায় পাতায়
মৃত্যুশ্বাস

ক্লান্ত রাজহংসীটি
ক্রমশ অন্ধকারে
সূর্যাস্তের
ঝুপুস আঁধারে...


নিসর্গ নির্যাস মাহাতো ।। ধর্ম


কাজল আর সুর্মার মাঝে
দু গাছা কাঁচের চুড়ির ফাক
উঁকি মারে যে চোখ
তাকে আমি বুক কাঁপা প্রিয়তমা বলি
ধর্ম ভেদে কালোরও সংজ্ঞা হয় বদল


অর্ক রায়হান ।। থিরথির কাঁপছে রঙিন বেলুনগুলো


তেমনিই থিরথির কাঁপছে রঙিন বেলুনগুলো।
থিয়েটার গেটের কাছে মঙ্গোলিয়ান চেহারার
ইউনিফর্ম পরা মেয়েটি আজ আর নেই। সিলন
চা’র আউটলেটের জায়গায় কী এক অস্ট্রেলিয়ান
জুস বার এখন! আগে মাইকেল বাবলের কভার
গান বাজতো। ওই কাউন্টারে তুমি ছিলে। আমি
এখানেই কোনও একটা চেয়ারে বসতাম। আহ্,
এভাবেই থিরথির থিরথির কাঁপতো উৎসবের
লালনীল বেলুনগুলো! নববর্ষ আসন্ন।


অরূপ সেনগুপ্ত ।। পথিক


এক রাতে ঘুমের মধ্যে শুরু পথ চলা,
গন্তব্য? নিশ্চিন্তপুর ছাড়িয়ে আরো অনেক অনেক দূর,
পথে একে একে চেনা মানুষগুলো সব যায় হারিয়ে, 
প্রতিবারেই কিছু নীরবতা, হা-হুতাশ, নয়নবৃষ্টি এক পশলা;

এখন সবই অচেনা; প্রগাঢ় তমস, খঁয়াটে নগর, শূণ্য খেয়ার তীর,
উজান শেষে ভাটার টানে পঙ্কিলতার ভীড়;
জংধরা ডুবো তরী, অস্পষ্ট অতীত, নৈঃশব্দের কথকতা, 
পূর্ব স্মৃতির ন্যায় দীর্ণ প্রহেলিকা, রাত্রির বধিরতা,
কিছু ভগ্নস্তুপ, আশাবরীর ভাঙা আশা, পুরানো পোষাক, 
ঐ শোনা যায় আষাঢ় মেঘের গুড়ু গুড়ু, সব বন্ধন ভেঙে ফেলার ডাক!

চোখের নিমেষে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এক একটা অটুট বন্ধন, অস্ফুট স্বপ্ন,
রাত ভোর হয়, জেগে ওঠে অলীক - ব্যর্থ মনস্কাম;
পথিক চলে পথ অহর্নিশ, আর কিছু দূরেই যে অন্তিম সীমান্ত,
আকাশে রামধনুর ঐ প্রান্তে পূবালির অণ্বেষণ।।



কাঞ্চন রায় ।। অল্প কথার গল্প



আমি কবিতা লিখেছি তুমি আবৃত্তি করে নিও,
আমার অল্প কথার গল্পটিকে কাহিনী করে দিও।

ছুটির দিনে আনমনা হয়ে পুরোনো কোনো গানের কথায়,
নিখোঁজ মনের ঠিকানা পেতে আমায় ভেবে নিও।

কোনো এক ক্ষণে হারিয়ে ফেলা, আঙ্গুলের কোলে আমার ছোঁয়া; 
ভালোবাসা খুঁজো সেই পরশে,আমায় ভালোবেসে ফেলো।

যেদিন তুমি একলা ঘরে বিভোর কোনো বাঁশির সুরে,
কল্পনারই দেয়াল জুড়ে আঁকছো আঁকিবুকি—

কিংবা শ্রাবণ, অগোছালো মন
ভরাট হৃদয় সিক্ত নয়ন;
আশ্রয়হীন খোলাচুলে একলা তুমি একলা মনে,
ভিজছো বিহ্বল দৃষ্টিতে—
পথ হারানোর সময় এলে সঙ্গী আমায় নিও।

এমন যদি নাও বা হয় তোমার মনের জানালাতে,
ভাবনা আমার খেয়ালখুশির থাকুক না হয় আসকারাতে।
প্রেমটা আমি সাজিয়ে নেব 
গল্প নাই বা সত্যি হলো,
স্বপ্ন দেখার দলিল আমার 
তাই ভাবতে তোমায় দোষ কি বলো?


টোকন মান্না ।। প্রতিমা



১.
এখন চাঁদের আলোয়
মাটির ক্ষরণ হয়।
এমনই করে কি হারিয়ে যাবে জীবন
কলাপাতার শিশিরের ফুটো চোখ দিয়ে
প্রতিমা মৃন্ময়।
 
২.
পাখিদের যাওয়া আসা নিবরতায় বৃষ্টি
প্রতিবাদ
রক্তাক্ত রাজনীতির পোকা খায় শেকড়।
আলো এসে ঘুরে যায় মননে
একটা ঝড়ে ভেঙে যায় নীড়
তবু সে অসহায় নয়
মৃত্যুর কাছে।
 
৩.
আজ ফিরে যাবো ঘরে
আগুন জ্বলছে আগুনের স্পর্শে
এমনই দেহের বাতাস এসে ডুবে যায়
গাঙনদীতে ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন