শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০২০
আমাদের কথা ।। ২২ আগষ্ট, ২০২০ ।। মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ৩
মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ৩।। ২২ আগষ্ট, ২০২০
আমাদের কথা
বিশেষ নিবন্ধ ।। সঞ্জয় রায়
মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ৩।। ২২ আগষ্ট, ২০২০
সঞ্জয় রায় ।। অচলায়তন
ধারাবাহিক পদ্য-নভেলেট/রাজীব সিংহ।। মত্তনীল অন্ধকারে
মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ৩।। ২২ আগষ্ট, ২০২০
রাজীব সিংহ।। মত্তনীল অন্ধকারে
শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০২০
ধারাবাহিক মুক্তগদ্য ।। ইন্দ্রজিৎ রায়
মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ৩।। ২২ আগষ্ট, ২০২০
ইন্দ্রজিৎ রায় ।। ফালতু ডায়রি , বৈশাখ ,বিশেবিষ
দুটি কবিতা ।। মলয় মজুমদার
মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ৩।। ২২ আগষ্ট, ২০২০
মলয় মজুমদার ।। দুটি কবিতা
ঈশ্বরের পদাবলী
১)
মাথার মধ্যে আঁশটে দুর্গন্ধ -
কেউ যেন ছোবল মেরে নিয়ে গেছে সংসার,
ঘামের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিষাক্ত আগুন ।
দুধেলা শরীরের ভাঁজে পোকা ,
কেউ একজন চেনা মানুষ আমার ,অথবা মানুষী ।
অজানা আকাশ
এখানেই মৃতের গল্প লিখেছিল কবি ।
এখানেই শরীর বিক্রি করেছিল এক নারী
তারই দুর্গন্ধ আমার শরীরে ।
মাংসাশী মেঘ ও মেয়েরা , আমি ও পুরুষেরা,
খাতা ভর্তি করে পাঠানো প্রেম,
খয় হয়ে যাওয়া জীবন নিয়ে বুড়ি বেশ্যার দল বিষাদের
গল্প বলে ।
আমি শুনি , শুনতে থাকি । পোয়াতি শরীরে ক্লান্তির
রকম ভেদ , প্রেমিকার মন । রঙিন খামে
বিষণ্ণ সুখ নিয়ে আসে রোদ্দুর । কে জানে কেন আসে,
কেন বার বার ভালোবাসি ভালোবাসি বলে দুর্বল যৌনতা
নিয়ে আসে দুপুরের ঘাম । তোকে ডাকে , ওই মেয়ে
তোকেই ডাকে কেউ । যোনির প্রয়োজন আজ পুরুষের ।
সব শূন্যতা আজ উন্মাদ , মাথার কোষগুলো বকবক করে,
তুই আছিস , তুই থাকিস । রোদ্দুরে লাল শরীর, একবার
ছায়ার পাশে গিয়ে দেখ
কালো রঙ হৃদয়কে লাথি মেরে
বিক্রি হয় শুধু , নাভি -স্তন-নাভির নীচের আকাশ
এইভাবেই তো একদিন
ঈশ্বরের সাথে দেখা হবে পুরানো চায়ের দোকানে ।
আমার ঘাম, আমার নষ্ট সামগ্রিক , আমার অবৈধ গল্প
ঘুণপোকার সাথে বদল করবো মুখপোড়া খচ্চরের গানে ।
২)
আবরণহীন স্বপ্নের সাথে ভেসেছি বহুকাল,
ক্ষুধা নিঙড়ে নাভির অন্ধকার খোঁজে বুনোহাঁস ।
শিকড়গুলো ছড়িয়ে পড়েছে,
মাটির সাথে সহবাস,
মাটি ও মাটির ভেতর আমি, আমার অচেনা কেউ,
শুধু দুই উরুর ভাঁজে খুঁজে পাওনা
বসন্তের উত্তাপ ।
জেগে থাকি । জেগে থাকি হাহাকার কিছু
শব্দের প্রয়োজনে
ঠিক সেই সময় তুমি আসো, চিমনির
ধোঁয়াটে অন্ধকারে
টিলার উপর সূর্য্যের আগুন, লাল রঙ স্পর্শ করে হাত ,
নদীর বুকে জ্বলে ওঠে প্রেম,
কে যেন সূর্য্যেকে হাতে করে দাঁড়ায় বারান্দায় ।
তবু আবরণহীন স্বপ্নের সাথে ভাঙা রাতের গল্প বলি,
পাখিরা শোনে
উত্তর দেয়না কোন , পাখিরা বোঝে -
বোঝাতে পারেনা কিছু
তখন নদীর ঢাল বেয়ে মাঝির চোখ ছুঁয়ে ফেলে পূর্নিমার স্রোত ।
মাঝি আবরণহীন ঘাসের সাথে পাথরের বুকে খোঁজে রক্ত গোলাপ, কবিতার জন্যে,
তোমার জন্যে
শব্দ নয় - গোলাপের এক একটি পাপড়িতেই তুমি শুনতে পারবে
প্রেমের কবিতা ।
তারপর হাঙর আর ঈশ্বর এক সাথে
পার হবে চূর্ণীর জল ।
কবিতা ।। কানাইলাল জানা অর্ক রায়হান অরূপ সেনগুপ্ত কাঞ্চন রায় টোকন মান্না সুদীপ্ত বিশ্বাস
মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ৩।। ২২ আগষ্ট, ২০২০
কানাইলাল জানা ।। যাদুকর যা করে
তেমন সুসময় এলে অবসরকে কেটে কেটে হাঁস বানাই। পুকুরে ছেড়ে দিলে প্যাঁক প্যাঁক করে ডানা ঝাপটায়। আমি ফিরে পাই পদ্ম আর শালুকে ভরা গ্রাম বাংলা..
যখন খুব লাফিয়ে ওঠে ইচ্ছে শক্তি, সম্ভাবনাকে কেটে কেটে বানাই জিরাফ ও তার বাচ্চা। ছেড়ে দিই রাস্তাঘাটেঃ ছেলে ছোকরারা জিরাফ দেখবে আর জিরাফের মতো লম্বা হতে চেষ্টা করবে...
ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে তাকেও কেটে চানা করি। দুঃসময়কে ঢোক গিলে যারা অগোছালো, এক চানা ছড়িয়ে দিই যাতে বেঁধে ফেলতে পারে অফুরন্ত ভালোবাসা। পাগলের প্রলাপের মতো ভয়
যাদের জড়িয়ে ধরেছে সেখানেও পাঠাই এক চানা,চুমকি লাগানো আকাশ থেকে যাতে ঝরতে পারে কামরাঙা সাইজের ঘুম...
অর্ক রায়হান ।। থিরথির কাঁপছে রঙিন বেলুনগুলো
তেমনিই থিরথির কাঁপছে রঙিন বেলুনগুলো।
থিয়েটার গেটের কাছে মঙ্গোলিয়ান চেহারার
ইউনিফর্ম পরা মেয়েটি আজ আর নেই। সিলন
চা’র আউটলেটের জায়গায় কী এক অস্ট্রেলিয়ান
জুস বার এখন! আগে মাইকেল বাবলের কভার
গান বাজতো। ওই কাউন্টারে তুমি ছিলে। আমি
এখানেই কোনও একটা চেয়ারে বসতাম। আহ্,
এভাবেই থিরথির থিরথির কাঁপতো উৎসবের
লালনীল বেলুনগুলো! নববর্ষ আসন্ন।
অরূপ সেনগুপ্ত ।। পথিক
এক রাতে ঘুমের মধ্যে শুরু পথ চলা,
গন্তব্য? নিশ্চিন্তপুর ছাড়িয়ে আরো অনেক অনেক দূর,
পথে একে একে চেনা মানুষগুলো সব যায় হারিয়ে,
প্রতিবারেই কিছু নীরবতা, হা-হুতাশ, নয়নবৃষ্টি এক পশলা;
এখন সবই অচেনা; প্রগাঢ় তমস, খঁয়াটে নগর, শূণ্য খেয়ার তীর,
উজান শেষে ভাটার টানে পঙ্কিলতার ভীড়;
জংধরা ডুবো তরী, অস্পষ্ট অতীত, নৈঃশব্দের কথকতা,
পূর্ব স্মৃতির ন্যায় দীর্ণ প্রহেলিকা, রাত্রির বধিরতা,
কিছু ভগ্নস্তুপ, আশাবরীর ভাঙা আশা, পুরানো পোষাক,
ঐ শোনা যায় আষাঢ় মেঘের গুড়ু গুড়ু, সব বন্ধন ভেঙে ফেলার ডাক!
চোখের নিমেষে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এক একটা অটুট বন্ধন, অস্ফুট স্বপ্ন,
রাত ভোর হয়, জেগে ওঠে অলীক - ব্যর্থ মনস্কাম;
পথিক চলে পথ অহর্নিশ, আর কিছু দূরেই যে অন্তিম সীমান্ত,
আকাশে রামধনুর ঐ প্রান্তে পূবালির অণ্বেষণ।।
কাঞ্চন রায় ।। অল্প কথার গল্প
আমি কবিতা লিখেছি তুমি আবৃত্তি করে নিও,
আমার অল্প কথার গল্পটিকে কাহিনী করে দিও।
ছুটির দিনে আনমনা হয়ে পুরোনো কোনো গানের কথায়,
নিখোঁজ মনের ঠিকানা পেতে আমায় ভেবে নিও।
কোনো এক ক্ষণে হারিয়ে ফেলা, আঙ্গুলের কোলে আমার ছোঁয়া;
ভালোবাসা খুঁজো সেই পরশে,আমায় ভালোবেসে ফেলো।
যেদিন তুমি একলা ঘরে বিভোর কোনো বাঁশির সুরে,
কল্পনারই দেয়াল জুড়ে আঁকছো আঁকিবুকি—
কিংবা শ্রাবণ, অগোছালো মন
ভরাট হৃদয় সিক্ত নয়ন;
আশ্রয়হীন খোলাচুলে একলা তুমি একলা মনে,
ভিজছো বিহ্বল দৃষ্টিতে—
পথ হারানোর সময় এলে সঙ্গী আমায় নিও।
এমন যদি নাও বা হয় তোমার মনের জানালাতে,
ভাবনা আমার খেয়ালখুশির থাকুক না হয় আসকারাতে।
প্রেমটা আমি সাজিয়ে নেব
গল্প নাই বা সত্যি হলো,
স্বপ্ন দেখার দলিল আমার
তাই ভাবতে তোমায় দোষ কি বলো?
টোকন মান্না ।। প্রতিমা
১.
এখন চাঁদের আলোয়
মাটির ক্ষরণ হয়।
এমনই করে কি হারিয়ে যাবে জীবন
কলাপাতার শিশিরের ফুটো চোখ দিয়ে
প্রতিমা মৃন্ময়।
২.
পাখিদের যাওয়া আসা নিবরতায় বৃষ্টি
প্রতিবাদ
রক্তাক্ত রাজনীতির পোকা খায় শেকড়।
আলো এসে ঘুরে যায় মননে
একটা ঝড়ে ভেঙে যায় নীড়
তবু সে অসহায় নয়
মৃত্যুর কাছে।
৩.
আজ ফিরে যাবো ঘরে
আগুন জ্বলছে আগুনের স্পর্শে
এমনই দেহের বাতাস এসে ডুবে যায়
গাঙনদীতে .
সুদীপ্ত বিশ্বাস ।। শূন্যতা
দিনকে ফাঁকি দিতে পারলেও
রাতের কাছে হেরে যাই রোজ!
স্বপ্নেরা সব মুখ থুবড়ে পড়ে
চোখের জলে বালিস ভিজতে থাকে।
তারপর খুব ক্লান্ত হলে,
গভীর ঘুমে পাই মৃত্যুর স্বাদ।
সারারাত জ্বলতে-জ্বলতে
রাতের তারার সলতে ফুরিয়ে যায়।
আবার একটা দিন...
আবার ছোটা শুরু...
কাঞ্চন রায় ।। অল্প কথার গল্প
আমি কবিতা লিখেছি তুমি আবৃত্তি করে নিও,আমার অল্প কথার গল্পটিকে কাহিনী করে দিও।
ছুটির দিনে আনমনা হয়ে পুরোনো কোনো গানের কথায়,
নিখোঁজ মনের ঠিকানা পেতে আমায় ভেবে নিও।
কোনো এক ক্ষণে হারিয়ে ফেলা, আঙ্গুলের কোলে আমার ছোঁয়া;
ভালোবাসা খুঁজো সেই পরশে,আমায় ভালোবেসে ফেলো।
যেদিন তুমি একলা ঘরে বিভোর কোনো বাঁশির সুরে,
কল্পনারই দেয়াল জুড়ে আঁকছো আঁকিবুকি—
কিংবা শ্রাবণ, অগোছালো মন
ভরাট হৃদয় সিক্ত নয়ন;
আশ্রয়হীন খোলাচুলে একলা তুমি একলা মনে,
ভিজছো বিহ্বল দৃষ্টিতে—
পথ হারানোর সময় এলে সঙ্গী আমায় নিও।
এমন যদি নাও বা হয় তোমার মনের জানালাতে,
ভাবনা আমার খেয়ালখুশির থাকুক না হয় আসকারাতে।
প্রেমটা আমি সাজিয়ে নেব
গল্প নাই বা সত্যি হলো,
স্বপ্ন দেখার দলিল আমার
তাই ভাবতে তোমায় দোষ কি বলো?
টোকন মান্না ।। প্রতিমা
১.
এখন চাঁদের আলোয়
মাটির ক্ষরণ হয়।
এমনই করে কি হারিয়ে যাবে জীবন
কলাপাতার শিশিরের ফুটো চোখ দিয়ে
প্রতিমা মৃন্ময়।
২.
পাখিদের যাওয়া আসা নিবরতায় বৃষ্টি
প্রতিবাদ
রক্তাক্ত রাজনীতির পোকা খায় শেকড়।
আলো এসে ঘুরে যায় মননে
একটা ঝড়ে ভেঙে যায় নীড়
তবু সে অসহায় নয়
মৃত্যুর কাছে।
৩.
আজ ফিরে যাবো ঘরে
আগুন জ্বলছে আগুনের স্পর্শে
এমনই দেহের বাতাস এসে ডুবে যায়
গাঙনদীতে .
সুদীপ্ত বিশ্বাস ।। শূন্যতা
দিনকে ফাঁকি দিতে পারলেও
রাতের কাছে হেরে যাই রোজ!
স্বপ্নেরা সব মুখ থুবড়ে পড়ে
চোখের জলে বালিস ভিজতে থাকে।
তারপর খুব ক্লান্ত হলে,
গভীর ঘুমে পাই মৃত্যুর স্বাদ।
সারারাত জ্বলতে-জ্বলতে
রাতের তারার সলতে ফুরিয়ে যায়।
আবার একটা দিন...
আবার ছোটা শুরু...
দুটি কবিতা ।। নিসর্গ নির্যাস মাহাতো
মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ৩।। ২২ আগষ্ট, ২০২০
ছবিঃ হিরণ মিত্র
নিসর্গ নির্যাস মাহাতো ।। দুটি কবিতা
নির্বাণ
প্রতিটি
কান্না বিন্দুর মাঝে
সুপ্ত
মোহ ত্যাগ থাকে
ঝরে
পড়ে মোক্ষলাভের ক্ষণে
পাপস্খালন
করে জল দেয়
নির্বাণ
গাছে
ধর্ম
কাজল
আর সুর্মার মাঝে
দু
গাছা কাঁচের চুড়ির ফাক
উঁকি
মারে যে চোখ
তাকে
আমি বুক কাঁপা প্রিয়তমা
বলি
ধর্ম
ভেদে কালোরও সংজ্ঞা হয় বদল
কবিতা ।। পার্থপ্রতিম আচার্য আহমেদ সাকির গোপা রায় অমিত দেশমুখ তাপস ওঝা
মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ৩।। ২২ আগষ্ট, ২০২০
পার্থপ্রতিম আচার্য ।। আহুতি
চড়াই
পাখির শব্দে গড়িয়ে যাচ্ছে
দুপুর।
পানা
পুকুরের বাতাস
মাঝে
মাঝে খেলে যাচ্ছে মাটির
দাওয়ায়...
উঠোনে
মেলে দেওয়া বৃত্তাকার মুড়ির
চালে
হাঁস
ঠোঁট দিলে
তেড়ে
আসছে তিরিক্ষি কুকুর।
রেডিওতে
গান ভাসছে
দেড়তলায়
চুল শুকাচ্ছে ধ্বনিহীন পিসি
কপাট
আঁটা ঘর...
দুদ্দাড়
সিঁড়ি,
আঙিনা,
গোয়াল,
নাটমন্দির
বসন্ত
দিঘির ঘাট ছাড়িয়ে
ছাপিয়ে
যাওয়া শরীরের গন্ধে
কচুপাতায়
লেগেছে মাতন।
বনানীর
আলোছায়ায়
রাঙাদিদিকে
আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে
ঢেউ...
সুপ্রাচীন
এই আহুতি
স্থবির
এই সময়ে
দাগ
টানছে কেন?
পানা পুকুরের বাতাস
মাঝে মাঝে খেলে যাচ্ছে মাটির দাওয়ায়...
উঠোনে মেলে দেওয়া বৃত্তাকার মুড়ির চালে
হাঁস ঠোঁট দিলে
তেড়ে আসছে তিরিক্ষি কুকুর।
রেডিওতে গান ভাসছে
দেড়তলায় চুল শুকাচ্ছে ধ্বনিহীন পিসি
কপাট আঁটা ঘর...
দুদ্দাড় সিঁড়ি, আঙিনা, গোয়াল, নাটমন্দির
বসন্ত দিঘির ঘাট ছাড়িয়ে
ছাপিয়ে যাওয়া শরীরের গন্ধে
কচুপাতায় লেগেছে মাতন।
বনানীর আলোছায়ায়
রাঙাদিদিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে ঢেউ...
সুপ্রাচীন এই আহুতি
স্থবির এই সময়ে
দাগ টানছে কেন?
আহমেদ সাকির ।। নাটকনামা
স্থান: ব্যালকনি অথবা ছাদ
কাল: রজনী নয় ঘটিকা
পাত্র: দেশপ্রেমিক যে-কেউ
দৃশ্য ১
দীর্ঘ যুদ্ধযাত্রার পথ নেমে গেছে খাড়াই এলোমেলো অসংবৃত...
ঘরবন্দি বহুদিন যাবৎ। অলস শরীরও চলে না ঠিক মতো
হাতে নেই কোনও কাজ। প্রতি মুহূর্তে উৎকণ্ঠা কী হবে এবার ?
যা ছিল ভাঁড়ার, সব শেষ! এভাবে চেয়েচিন্তে কদ্দিন চলে আর!
কোয়ারান্টিন, লকডাউনে এক হয়ে গেছে গ্রাম আর শহর,
এসময় খাদের দিকে তাকানো ছাড়া মনে নেই কোনও জোর।
দৃশ্য ২
প্রথম অঙ্ক
ধর্মাবতার, রক্ষে করুন আমাদের ডালপালা
শিকড় চায় একটু জল নুন
ধর্মাবতার, এই একমুঠো জল পেলে
মুথা ঘাস ঠিকই উঠবে আবার শক্ত পাথর ঠেলে
ধর্মাবতার, এই ঊষর ভূমিতে বৃষ্টি হয়ে নামুন
দ্বিতীয় অঙ্ক
কথামতো অন্ধকারে ডুবেছে প্রায় সিংহভাগ বাড়ি
আলো বন্ধ রেখে চলছে মোমবাতি, টর্চ বা মোবাইলে লাইটিনিং শো
আমাদের দেখাতে হবে একশো ত্রিশ কোটি আমরা সম্মিলিত আছি,
যতই রুটি-রোজগেরেহীন হই, পায়ের থেকে সরে যাক মাটি,
আমরা সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রেখে চলেছি!
দৃশ্য ৩
ধর্মাবতার, ঘর নেই, তায় ব্যালকনি আর ছাদ!
মাথার ওপর যেটুকু আছে আকাশ,
তারার বদলে কালো কালো সব খাত।
ধর্মাবতার, সামর্থ্য নেই মোমবাতি কিনে জ্বালা
বুকের শিশু অন্নহীন, আমিও তিনদিন
কুকুরের পাশে পড়ে আছে খালি থালা।
অনেকের মতো হা-পিত্যেশে আমিও তাকাই দূরে
মোমবাতি, আতশবাজি, পটকা....
ধর্মাবতার, আলোয় আসে কি ক্ষুধার অন্ন উড়ে ?
গোপা রায় ।। মার্জনা
অনেক দিন পরে ঝরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি,
বন্দী দশা ,মনের ব্যথায় আজ কেঁদেছে সৃষ্টি।
গুমরে ওঠে যাতনা সব ,বড্ডো অসহায়,
বিশ্ব জুড়ে মৃত্যু মিছিল দুঃখ রাখা দায়।
অনেক দিলে শাস্তি প্রভু, মার্জনা চায় প্রাণ,
তুমিই বাঁচাও ,তুমি টলাও, তোমারই সব দান।
উদ্ধত মন বুঝলো কি আজ? ক্ষমতা হীন কত,
বড়াই করে চাঁদ ধরেছে, মহাকাশেও ক্ষত।
অতি ক্ষুদ্র অনুর কাছে , হয়েছে পরাজয়,
সমস্ত টা গ্রাস করেছে অবিশ্বাস আর ভয়।
সেখান থেকে ফিরতে হবে, দীর্ঘ পথের শেষে,
সেই আশাতেই চলতে হবে, সেই স্বপ্নেই ভেসে।
অমিত দেশমুখ ।। অঙ্ক
অচেনা মানুষ যদি ভালবাসতে চায়?
ভালোবাসা দেবো।
অচেনা মানুষ যদি ফুল ভালোবাসে?
ফুল গাছ এনে দেবো।
অচেনা মানুষ যদি সঙ্গ চায়?মুহূর্ত চায়?
সঙ্গ দেবো।ভালোবাসা দেবো।
অচেনা মানুষ যদি পুব দিকে গেলে রেগে যায়?
পুব দিকেই যাবো।
তাপস ওঝা ।। নির্মাণের প্রতিবিম্ব
ভাব মানুষের ছায়া দেখে দেখে
শেষ পর্যন্ত
একটি মানুষের মতো কিছু কাছাকাছি এল।
তেমন মানুষটির মাধুর্যনির্যাসে
কত বৃত্তান্তপাঠের মোহ !
ইতিহাসের একজন রাজা যেমন
বার বার বদলে ফেলে তার অনুসরণকারী
আর নিজেও বদলে যায় বার বার
সেরকম তর্জমার বিহ্বলতায়
ভাব মানুষের ছবি আঁকলাম।
এখন আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমারই
হন্তারক !
ভালোবাসা দেবো।
অচেনা মানুষ যদি ফুল ভালোবাসে?
ফুল গাছ এনে দেবো।
অচেনা মানুষ যদি সঙ্গ চায়?মুহূর্ত চায়?
সঙ্গ দেবো।ভালোবাসা দেবো।
অচেনা মানুষ যদি পুব দিকে গেলে রেগে যায়?
পুব দিকেই যাবো।
তাপস ওঝা ।। নির্মাণের প্রতিবিম্ব
ভাব মানুষের ছায়া দেখে দেখেশেষ পর্যন্ত
একটি মানুষের মতো কিছু কাছাকাছি এল।
তেমন মানুষটির মাধুর্যনির্যাসে
কত বৃত্তান্তপাঠের মোহ !
ইতিহাসের একজন রাজা যেমন
বার বার বদলে ফেলে তার অনুসরণকারী
আর নিজেও বদলে যায় বার বার
সেরকম তর্জমার বিহ্বলতায়
ভাব মানুষের ছবি আঁকলাম।
এখন আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমারই
হন্তারক !
গুচ্ছকবিতা ।। শান্তিময় মুখোপাধ্যায়
মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ৩।। ২২ আগষ্ট, ২০২০
শান্তিময় মুখোপাধ্যায় ।। জাঢ্যগতির সূত্রাবলী
১.
জঙ্গমের ইচ্ছে চোয়ালে রেখে কোয়ারেন্টাইন
লং ড্রাইভে যাবার স্বপ্ন দেখছে
সামাজিক দূরত্বের সালতামামি নিয়ে স্টিয়ারিং
লুকিয়ে রাখলো পিছু নেয়া ছায়াদের সংক্রমণ
পলিব্যাগ ভর্তি খিদে নিয়ে তুমিও একসময়
ঘরে ফেরো কনফেকশনারি সন্ধেয়
স্থির গতির সূত্রগুলো গোড়ালিতে জড়িয়ে
২.
সংখ্যাগুলো হিসেব ছাড়িয়ে যাচ্ছে
বিপ বিপ শব্দঘর বা ঠান্ডা স্টিলের দেরাজ
দিন থেকে ঘন্টা থেকে নিমেষ উপচে
আপাদমস্তক খাঁ খাঁ শহরতলির দিকে
ফরমালডিহাইডের নেশায় চুর গাজন উৎসবও
আরো জোর হাপর টেনে টেনে
শুভ মহরতের ঘাড়ে শ্বাস ফেললো
টুকিটাকি সেরে দীর্ঘমেয়াদি ঘুমের অপেক্ষা এখন
খুব শান্ত একটা হাত মাধ্যাকর্ষণ বরাবর নেমে আসার
৩.
মুখ লুকিয়ে রাখছি আর মুখোশ প্রকাশ্য হয়ে উঠছে
ভার্চুয়াল খুনসুটিগুলো এবার ড্রইংরুম ছাড়িয়ে
জিরো ওয়াটের ইচ্ছেয় পাল তুলে দে..
সিনটেক্স বদলে ফেলছে যাবতীয় পূর্বাভাস
ক্লোরোফিল ঘরাণা আর তার ক্যামোফ্লাজ
কিছুটা আড়াল হতেই রেমডেসিভির
তাথৈ তাতাথৈ রক্তজালিকায়
সাইবার নিষেধের ওয়াল টপকে
৪.
ফাঁকা পলিব্যাগ কি গেয়ে উঠলো রেশন
অর্ধেক স্বপ্নচাল নিয়ে ঘুমের ভেতর
গৃহস্থের বউ ফিরে এলো?
স্যানিটাইজারের মিহিন গন্ধে শ্বাস নিতে নিতে
তুমিও পেরিয়ে যাচ্ছো মন্থর সভ্যতার ফাটল
দিনরাত্রির মধ্যবর্তী শুনশান
আখ মাড়াইয়ের কল
গুড়ের মিষ্টি হাওয়ায় ঝুলে থাকা
কয়েক ফালি আকাশ
আবার কি ফিরিয়ে দেবে
আইসোলেশনের জমাট অন্ধকার!
৫.
কোথাও লিপটন রেড লেবেল
ছায়া ফেলছে মানচিত্রে
হটস্পট ফুটে ওঠা এই নির্জন পাড়াগুলো
কখন কোরা থান পরে এসে দাঁড়াবে
চোখ রাখছে পরিসংখ্যান
ইজেলের চোখ থেকে জল গড়িয়ে নামলে
প্যালেটময় তারাদের অসহনীয় বিদ্রুপ
কনফারেন্স টেবিল থেকে জিরো আওয়ার
গোগ্রাসে গিলছে ব্যালান্সশিটের পাতা
৬.
পরাজীবনের শিকে আড়াআড়ি ঝুলে আছে মাংসবাজার
নিশ্বাসের ভাঁজে তার সেঁকোগন্ধ লুকিয়ে পরিযায়ীরা
উড়ে গেলো অদৃশ্যের মলাট খুলে
একফালি দৃষ্টিবদলে মেরুদন্ডে চাপ চাপ ঠান্ডা
আলোর খুপরিতে গুঁজে দিচ্ছে সংক্রমণ
প্রাণে খুশি নয়, সংশয়ের তুফান
এই ভাসচ্ছে তো ওই ডোবাচ্ছে
করোটিরেখায় দেয়াল লিখনের ভুলভুলাইয়া
শংসাপত্র লিখবে বলে নিয়ে এলো ভর্ৎসনা
৭.
জিরো পয়েন্টের দুপাশে থেমে আছে
আঙুলের কথাবিনিময়
এপারের খাঁ খাঁ নীরবতা হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে
তোমার অনামিকায়
বোবা সরোদের পিছুটান রেখে গেলো
নো ম্যানস ল্যান্ড বরাবর ভার্চুয়াল চুম্বনরেখা
পা টিপে টিপে এগিয়ে আসছে ইনবক্সের রেটিনায়
রাতপোষাকের ওমে আইসোলেটেড শরীর ভিজিয়ে
৮.
দরোজার অন্ধকার খুলে এক্ষুণি কেউ ডেকে উঠবে
কাঁপা গলায় অস্পষ্ট কিছু বোলে মিলিয়ে যাবে হাওয়ায়
ক্রমাগত হুটারের কঁকিয়ে ওঠা শুনে
এম্বুলেন্স ক্লান্তিতে ঢলে পড়লো
কয়েকশো মিলিয়ন ঘুমে
মৃত্যুর সিরিয়াল উপচে পড়ছে
পরিসংখ্যান থেকে
আইসোলেশন থেকে মর্গের বারান্দা
দুরত্ব মাপছে প্রাতঃভ্রমণ
৯.
বিজ্ঞাপন বিরতির পর বাকিটুকু যা
ফেবলস। তর্জনীর মিথ্যে বসানো
ট্রাপিজের ছেঁড়া সুতোয় ঝুলছে
পরাজীবনের কার্নিভাল নিয়ন্ত্রণকারী
ভাতঘুম আর অত্যাবশ্যক দিনযামিনী
সামাজিক দূরত্ব রেখেই সংবিধান খসালো
সেইসব পোকায় কাটা অনুচ্ছেদ
উনুনভর্তি গামলায়
রোগা হাতে মা সেখান থেকে খিদে বেড়ে দিচ্ছেন থালায়
১০.
মৃতদের সঙ্গে চোরপুলিশ খেলছে লেজিসলেশন
সংবিধানের অপরিণত আলো এই বিস্তীর্ণ ইয়ার্ডে
দাফনের পূর্ব প্রস্তুতি যেন
কবরের ভাঁজ খুলে শোনাচ্ছে ডিভাইন কমেডি
স্মৃতিফলকগুলো খুব ঠান্ডা পায়ে এগিয়ে এলে
সবুজের প্রাত্যহিক মেলে ধরছে পরাবাস্তব ঘুণ
চাপচাপ জড়দের পাশ কাটিয়ে
শিকড়ের ফিসফাস
শোনা যাচ্ছে কান পাতলেই