শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০২০

কবিতা ।। পার্থপ্রতিম আচার্য আহমেদ সাকির গোপা রায় অমিত দেশমুখ তাপস ওঝা

মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ৩।। ২২ আগষ্ট, ২০২০



ছবিঃ হিরণ মিত্র

পার্থপ্রতিম আচার্য ।। আহুতি


চড়াই পাখির শব্দে গড়িয়ে যাচ্ছে দুপুর।
পানা পুকুরের বাতাস
মাঝে মাঝে খেলে যাচ্ছে মাটির দাওয়ায়...
উঠোনে মেলে দেওয়া বৃত্তাকার মুড়ির চালে
হাঁস ঠোঁট দিলে
তেড়ে আসছে তিরিক্ষি কুকুর।

রেডিওতে গান ভাসছে
দেড়তলায় চুল শুকাচ্ছে ধ্বনিহীন পিসি

কপাট আঁটা ঘর...
দুদ্দাড় সিঁড়ি, আঙিনা, গোয়াল, নাটমন্দির
বসন্ত দিঘির ঘাট ছাড়িয়ে
ছাপিয়ে যাওয়া শরীরের গন্ধে
কচুপাতায় লেগেছে মাতন।

বনানীর আলোছায়ায়
রাঙাদিদিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে ঢেউ...

সুপ্রাচীন এই আহুতি
স্থবির এই সময়ে
দাগ টানছে কেন?


আহমেদ সাকির ।। নাটকনামা


স্থান: ব্যালকনি অথবা ছাদ
কাল: রজনী নয় ঘটিকা
পাত্র: দেশপ্রেমিক যে-কেউ


দৃশ্য ১

দীর্ঘ যুদ্ধযাত্রার পথ নেমে গেছে খাড়াই এলোমেলো অসংবৃত...
ঘরবন্দি বহুদিন যাবৎ। অলস শরীরও চলে না ঠিক মতো
হাতে নেই কোনও কাজ। প্রতি মুহূর্তে উৎকণ্ঠা কী হবে এবার ?
যা ছিল ভাঁড়ার, সব শেষ! এভাবে চেয়েচিন্তে কদ্দিন চলে আর!
কোয়ারান্টিন, লকডাউনে এক হয়ে গেছে গ্রাম আর শহর,
এসময় খাদের দিকে তাকানো ছাড়া মনে নেই কোনও জোর।

দৃশ্য ২

প্রথম অঙ্ক

ধর্মাবতার, রক্ষে করুন আমাদের ডালপালা
শিকড় চায় একটু জল নুন
ধর্মাবতার, এই একমুঠো জল পেলে
মুথা ঘাস ঠিকই উঠবে আবার শক্ত পাথর ঠেলে
ধর্মাবতার, এই ঊষর ভূমিতে বৃষ্টি হয়ে নামুন

দ্বিতীয় অঙ্ক

কথামতো অন্ধকারে ডুবেছে প্রায় সিংহভাগ বাড়ি
আলো বন্ধ রেখে চলছে মোমবাতি, টর্চ বা মোবাইলে লাইটিনিং শো
আমাদের দেখাতে হবে একশো ত্রিশ কোটি আমরা সম্মিলিত আছি,
যতই রুটি-রোজগেরেহীন হই, পায়ের থেকে সরে যাক মাটি,
আমরা সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রেখে চলেছি!

দৃশ্য ৩

ধর্মাবতার, ঘর নেই, তায় ব্যালকনি আর ছাদ!
মাথার ওপর যেটুকু আছে আকাশ,
তারার বদলে কালো কালো সব খাত।
ধর্মাবতার, সামর্থ্য নেই মোমবাতি কিনে জ্বালা
বুকের শিশু অন্নহীন, আমিও তিনদিন
কুকুরের পাশে পড়ে আছে খালি থালা।
অনেকের মতো হা-পিত্যেশে আমিও তাকাই দূরে
মোমবাতি, আতশবাজি, পটকা....
ধর্মাবতার, আলোয় আসে কি ক্ষুধার অন্ন উড়ে ?




গোপা রায় ।। মার্জনা

অনেক দিন পরে ঝরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি,
বন্দী দশা ,মনের ব্যথায় আজ কেঁদেছে সৃষ্টি।
গুমরে ওঠে যাতনা সব ,বড্ডো অসহায়,
বিশ্ব জুড়ে মৃত্যু মিছিল দুঃখ রাখা দায়।
অনেক দিলে শাস্তি প্রভু, মার্জনা চায় প্রাণ,
তুমিই বাঁচাও ,তুমি টলাও, তোমারই সব দান।
উদ্ধত মন বুঝলো কি আজ? ক্ষমতা হীন কত,
বড়াই করে চাঁদ ধরেছে, মহাকাশেও ক্ষত।
অতি ক্ষুদ্র অনুর কাছে , হয়েছে পরাজয়,
সমস্ত টা গ্রাস করেছে অবিশ্বাস আর ভয়।
সেখান থেকে ফিরতে হবে, দীর্ঘ পথের শেষে,
সেই আশাতেই চলতে হবে, সেই স্বপ্নেই ভেসে।


অমিত দেশমুখ ।। অঙ্ক 

অচেনা মানুষ যদি ভালবাসতে চায়?

ভালোবাসা দেবো।


অচেনা মানুষ যদি ফুল ভালোবাসে?

ফুল গাছ এনে দেবো।


অচেনা মানুষ যদি সঙ্গ চায়?মুহূর্ত চায়?

সঙ্গ দেবো।ভালোবাসা দেবো।


অচেনা মানুষ যদি পুব দিকে গেলে রেগে যায়?

পুব দিকেই যাবো।


তাপস ওঝা ।। নির্মাণের প্রতিবিম্ব

ভাব মানুষের ছায়া দেখে দেখে

শেষ পর্যন্ত

একটি মানুষের মতো কিছু কাছাকাছি এল।

তেমন মানুষটির মাধুর্যনির্যাসে

কত বৃত্তান্তপাঠের মোহ !

ইতিহাসের একজন রাজা যেমন

বার বার বদলে ফেলে তার অনুসরণকারী

আর নিজেও বদলে যায় বার বার

সেরকম তর্জমার বিহ্বলতায়

ভাব মানুষের ছবি আঁকলাম।


এখন আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমারই

হন্তারক !



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন