মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ৩।। ২২ আগষ্ট, ২০২০
শান্তিময় মুখোপাধ্যায় ।। জাঢ্যগতির সূত্রাবলী
১.
জঙ্গমের ইচ্ছে চোয়ালে রেখে কোয়ারেন্টাইন
লং ড্রাইভে যাবার স্বপ্ন দেখছে
সামাজিক দূরত্বের সালতামামি নিয়ে স্টিয়ারিং
লুকিয়ে রাখলো পিছু নেয়া ছায়াদের সংক্রমণ
পলিব্যাগ ভর্তি খিদে নিয়ে তুমিও একসময়
ঘরে ফেরো কনফেকশনারি সন্ধেয়
স্থির গতির সূত্রগুলো গোড়ালিতে জড়িয়ে
২.
সংখ্যাগুলো হিসেব ছাড়িয়ে যাচ্ছে
বিপ বিপ শব্দঘর বা ঠান্ডা স্টিলের দেরাজ
দিন থেকে ঘন্টা থেকে নিমেষ উপচে
আপাদমস্তক খাঁ খাঁ শহরতলির দিকে
ফরমালডিহাইডের নেশায় চুর গাজন উৎসবও
আরো জোর হাপর টেনে টেনে
শুভ মহরতের ঘাড়ে শ্বাস ফেললো
টুকিটাকি সেরে দীর্ঘমেয়াদি ঘুমের অপেক্ষা এখন
খুব শান্ত একটা হাত মাধ্যাকর্ষণ বরাবর নেমে আসার
৩.
মুখ লুকিয়ে রাখছি আর মুখোশ প্রকাশ্য হয়ে উঠছে
ভার্চুয়াল খুনসুটিগুলো এবার ড্রইংরুম ছাড়িয়ে
জিরো ওয়াটের ইচ্ছেয় পাল তুলে দে..
সিনটেক্স বদলে ফেলছে যাবতীয় পূর্বাভাস
ক্লোরোফিল ঘরাণা আর তার ক্যামোফ্লাজ
কিছুটা আড়াল হতেই রেমডেসিভির
তাথৈ তাতাথৈ রক্তজালিকায়
সাইবার নিষেধের ওয়াল টপকে
৪.
ফাঁকা পলিব্যাগ কি গেয়ে উঠলো রেশন
অর্ধেক স্বপ্নচাল নিয়ে ঘুমের ভেতর
গৃহস্থের বউ ফিরে এলো?
স্যানিটাইজারের মিহিন গন্ধে শ্বাস নিতে নিতে
তুমিও পেরিয়ে যাচ্ছো মন্থর সভ্যতার ফাটল
দিনরাত্রির মধ্যবর্তী শুনশান
আখ মাড়াইয়ের কল
গুড়ের মিষ্টি হাওয়ায় ঝুলে থাকা
কয়েক ফালি আকাশ
আবার কি ফিরিয়ে দেবে
আইসোলেশনের জমাট অন্ধকার!
৫.
কোথাও লিপটন রেড লেবেল
ছায়া ফেলছে মানচিত্রে
হটস্পট ফুটে ওঠা এই নির্জন পাড়াগুলো
কখন কোরা থান পরে এসে দাঁড়াবে
চোখ রাখছে পরিসংখ্যান
ইজেলের চোখ থেকে জল গড়িয়ে নামলে
প্যালেটময় তারাদের অসহনীয় বিদ্রুপ
কনফারেন্স টেবিল থেকে জিরো আওয়ার
গোগ্রাসে গিলছে ব্যালান্সশিটের পাতা
৬.
পরাজীবনের শিকে আড়াআড়ি ঝুলে আছে মাংসবাজার
নিশ্বাসের ভাঁজে তার সেঁকোগন্ধ লুকিয়ে পরিযায়ীরা
উড়ে গেলো অদৃশ্যের মলাট খুলে
একফালি দৃষ্টিবদলে মেরুদন্ডে চাপ চাপ ঠান্ডা
আলোর খুপরিতে গুঁজে দিচ্ছে সংক্রমণ
প্রাণে খুশি নয়, সংশয়ের তুফান
এই ভাসচ্ছে তো ওই ডোবাচ্ছে
করোটিরেখায় দেয়াল লিখনের ভুলভুলাইয়া
শংসাপত্র লিখবে বলে নিয়ে এলো ভর্ৎসনা
৭.
জিরো পয়েন্টের দুপাশে থেমে আছে
আঙুলের কথাবিনিময়
এপারের খাঁ খাঁ নীরবতা হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে
তোমার অনামিকায়
বোবা সরোদের পিছুটান রেখে গেলো
নো ম্যানস ল্যান্ড বরাবর ভার্চুয়াল চুম্বনরেখা
পা টিপে টিপে এগিয়ে আসছে ইনবক্সের রেটিনায়
রাতপোষাকের ওমে আইসোলেটেড শরীর ভিজিয়ে
৮.
দরোজার অন্ধকার খুলে এক্ষুণি কেউ ডেকে উঠবে
কাঁপা গলায় অস্পষ্ট কিছু বোলে মিলিয়ে যাবে হাওয়ায়
ক্রমাগত হুটারের কঁকিয়ে ওঠা শুনে
এম্বুলেন্স ক্লান্তিতে ঢলে পড়লো
কয়েকশো মিলিয়ন ঘুমে
মৃত্যুর সিরিয়াল উপচে পড়ছে
পরিসংখ্যান থেকে
আইসোলেশন থেকে মর্গের বারান্দা
দুরত্ব মাপছে প্রাতঃভ্রমণ
৯.
বিজ্ঞাপন বিরতির পর বাকিটুকু যা
ফেবলস। তর্জনীর মিথ্যে বসানো
ট্রাপিজের ছেঁড়া সুতোয় ঝুলছে
পরাজীবনের কার্নিভাল নিয়ন্ত্রণকারী
ভাতঘুম আর অত্যাবশ্যক দিনযামিনী
সামাজিক দূরত্ব রেখেই সংবিধান খসালো
সেইসব পোকায় কাটা অনুচ্ছেদ
উনুনভর্তি গামলায়
রোগা হাতে মা সেখান থেকে খিদে বেড়ে দিচ্ছেন থালায়
১০.
মৃতদের সঙ্গে চোরপুলিশ খেলছে লেজিসলেশন
সংবিধানের অপরিণত আলো এই বিস্তীর্ণ ইয়ার্ডে
দাফনের পূর্ব প্রস্তুতি যেন
কবরের ভাঁজ খুলে শোনাচ্ছে ডিভাইন কমেডি
স্মৃতিফলকগুলো খুব ঠান্ডা পায়ে এগিয়ে এলে
সবুজের প্রাত্যহিক মেলে ধরছে পরাবাস্তব ঘুণ
চাপচাপ জড়দের পাশ কাটিয়ে
শিকড়ের ফিসফাস
শোনা যাচ্ছে কান পাতলেই
হাবুডুবু খাওয়া সময়কে ঠিক ধরেছ শান্তিদা
উত্তরমুছুন