শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২০

একগুচ্ছ কবিতা ।। দেবাশিস তেওয়ারী

মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ২।। ১৫ আগষ্ট, ২০২০



দেবাশিস তেওয়ারী।। একগুচ্ছ কবিতা

মাথুর বিকেল

পর্যাপ্ত দেখা না-দেখার মাঝখানে থাকা
আমাদের সেই পুরাতন বাসরঘর আরেকবার
ঝলসে উঠল বারুদগন্ধী এই রোদে।
প্রণয়বেলায় কোন ভোজসভা থেকে
আসা তুমি হে মহামান্য আমার দেরাজ ঘেঁটে
বের করছ পুরাতন বাস্তুপচা টুকরো ভণিতা।
যথেস্ট ছন্দে বলা এইসব কথাদের গায়ে যেন
বাতাস না লাগে।বলতে বলতে একফোঁটা
মেঘ এসে কালো করে ঢেকে দেয়
আমাদের মাথুর-বিকেল। 

অবগাহনের মন্ত্র

সে এক বৃষ্টিঘোর,অমানিশা তর্জমা করেছি।
প্রথম রাত্রিকে আমার ভালোলাগার ইচ্ছেডানা দিয়ে
ভিজিয়েছিলাম।স্তবকের পর স্তবক জুড়ে
সে সব ছিল ভালবাসার বিমূর্ত অধ্যায়।


আজ রাত্রিটিকেই উপেক্ষা করি, যে আমার
আচ্ছাদনের সামগ্রী হয়েছে।তবে কি আবার
ভাসছি সেই আদিমতার পঙ্কিল দামে।
ভাসতে চাই আমি,নিঃশ্বাসটুকু জিঁইয়ে রেখে
তালগাছের ডোঙা হয়ে অন্যকেও ভাসাতে চাই----
বিস্ময়চিহ্নের মতো তখন অবগাহনের মন্ত্র আমার সামনের
ডুবজলে ভাসতে থাকে দেখি।


গন্তব্য

এভাবে পণ্ডশ্রম করে জীবনের বৈধব্য ঘেঁটে
তুলে আনি এক-একটি গন্তব্য।অপমানিতের
চরম ছায়ায় যারা আজও হেঁটে বেড়ায়।কবে
কোন দিকশূণ্যপুর থেকে আসা এক-একটি
গন্তব্যের কিনারা ছোঁয় তালপুকুর রোড।
যেখানে কোনও ঘটিও ডোবে না।আর অসহিষ্ণু আলোয়
দেখি এক-একটি বৈধব্য,তালপুকুর রোডের উপরে তৈরি
করা ওভারব্রিজে সারসার দাঁড়িয়ে থাকে আর
প্রত্যাশা করে পুরুষ - হৃদয়।



মায়াবন বিহারিণী হরিণী

এক-একটি কিনার থেকে আরেক কিনারে উঠে আসা
সূর্য-সকাল বাতাস প্রত্যাশা করে কথাবার্তা বলে----
সে-সব কাগুজে আলাপ।মুড়ি-মুড়কির মতো
খদ্দেররা কিনে কিনে খায়----ঠোঙায় ঠোঙায়।
তারপর বিকেলের ছায়াচ্ছন্ন চড়াই আলোয় সেই সব
ঠোঙা থেকে জন্ম নেওয়া সূর্যাস্তের রঙে
দেখি দূরে দীপ জ্বলে ওঠে।মায়াবন বিহারিণী হরিণীরা চরে বেড়ায়।



বাতিল

বাতিল ঘরের গল্প এসে বসে আমাদের ঘরে
যে নদী উজান ছিল তার ঢেউয়ে সদা-ভাসমান
ভাঙা ভাঙা চূর্ণ-কথা অভিমুখ থেকে অভিমুখে
বদলে যেতে যেতে দেখি সেখানেও পাড় ভেঙে পড়ে
পাশে ধানক্ষেত,পাশে মাঠ মাঠ,একাকার জমি
মন্ত্রের সাগর থেকে উঠে আসা কৃষক তোমায়
এই আমি প্রণতি জানিয়ে রাখি,এই ভোরবেলা
প্রচণ্ড সূর্যের তেজে আমাদের কঙ্কাল-মাটিতে
মিশে মিশে একাকার গল্প করে সে সব বাতিল।


সমাধির বুকে

অক্ষর চেয়েছি বলে অক্ষরের কাছে ফিরে গেছি
সুর-তাল-ছন্দ-লয় সবকিছু ফিরে ফিরে আসে
উদাস হাওয়ার টানে, সন্ন্যাসী এসেছে কোনও মতে
তার ভৈরবীও সাথে ব্যাকুল সাঁঝের বাসনায়
কারুশিল্পে ভাসমান, সদা কর্ণে সুরের ঝংকার।
পটের বিবির মতো আঁকা থাকে শিল্পের সে গতি
সে যেন সুনীল দাস পটে আঁকা অন্য কোনও ঘোড়া
কিংবা কোনও কাকিনীর চিত্র এটা শুভাপ্রসন্নের
শয্যা থেকে ধূলো ওড়ে অক্ষর-সমাধি বুকে নিয়ে
জেগে থাকা লাশ ওরা----- কি তবে কঙ্কাল-আখড়া
বলতে বলতে টান ওঠে,সন্ন্যাসী তো কবে ফিরে গেছে
রেখে গেছে আলখাল্লা,আলোয়ান-----সমাধির বুকে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন