মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ২।। ১৫ আগষ্ট, ২০২০
সবর্ণা চট্টোপাধ্যায় ।। তিনটি কবিতা
লকডাউনের ডায়রী থেকে ১
আতঙ্কে কেঁপে উঠছি থেকে থেকে।
ভয় হয় রাস্তার শূন্যতায়।
কতদিন আর কতদিন জানা নেই?
সে এক অদৃশ্য ঘাতক
জানা নেই কোনদিক থেকে ছুটে আসবে মরণাস্ত্র
নেই বিশল্যকরণী
চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়
কেমন আছে বৃদ্ধ মা বাবা?
ভোরের আলো?
নিজেকে এক খোলসের ভেতর জমাতে জমাতে
ঠিকরে আসে চোখ
মন ভোলাতে বেছে নিই বাহারী প্রসাধন।
নির্মল এক আকাশের কাছে
উগড়ে দিই ব্যর্থ যন্ত্রণা।
চাল ডাল তেল নুন।
প্রয়োজন ব্যাস এটুকুই।
ঘরের ভেতর তিনটে গলার স্বর। জড়িয়ে ধরছে
ক্রমশ একে অপরকে...
আসলে বিষণ্ন মানুষ বড়ো দুর্বল।
অনিদ্রার দুঃস্বপ্ন দেখে খোলা চোখে। যদি আর
না পারি দিতে অন্ন জল?
লকডাউনের ডায়রী থেকে ২
শূন্যতায় গায়ে আছরে পড়ছে হাওয়া
ত্রস্ত মানুষ ছুটে চলেছে ক্রমশ অন্ধ কোটরে।
দৃশ্য থেকে বহুদূরে, আলোহীন কূপের ভেতর
বাড়ছে দেহের উত্তাপ।
খাদ্য নেই, নিথর বাতাস…
মুখোশের আড়ালে লাল হয়ে ওঠা চোখ
ভয়াবহতায় হাহুতাশ করছে ঈশ্বরের দরবারে।
এ মৃত্যুভয় আমাকে নিয়ে যায় অদৃশ্য কবরে।
ভাতের গন্ধ নেই। স্পর্শ নেই।
আমরা ছিনিয়ে নিই আমাদের ভাগ
যারা অভুক্ত তারা আমাদের কেউ না!
বুকে পাথর রেখে চওড়া করছি পথ
নিষ্ঠুর জীবন।
ভেসে আসা পরিযায়ী চিৎকার
চোখে জল,
ঢেকে দিই তুলোর বালিশের নীচে।
স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ে
ঘর্মাক্ত মৃতদেহগুলোর ওপর!
লকডাউনের ডায়রী থেকে ৩
অসহায় আকাশ
কাতারে কাতারে নিঃশ্বাস ফেলছে তারা
একে অন্যের ঘাড়ে,
দুমড়ানো মুচরানো শরীর
পায়ে হাঁটা বিস্তর পথ
ঘরে ফেরার কি কঠিন আকুতি!
তবু অসহায়। আমরা বড়ো অসহায়
পারছি না বাড়িয়ে দিতে হাত
এখন আর স্পর্শের ঋণ নেই
নেই মানবতার।
দুহাতে জড়িয়ে আছি শুধু নিজেদের
আগামী রাত্রির আতঙ্ক নিয়ে
হুঁশ নেই আর,
কি রাষ্ট্র কি মানুষ কি প্রতিশ্রুতি
শুধু সত্য জীবন
নিজেকে আটক করে, পেরিয়ে যাওয়া
আরো একটা দুর্বোধ্য পাহাড়!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন