বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০২০

দুটি কবিতা/সমরেশ মন্ডল



সমরেশ মন্ডল।।দুটি কবিতা


দেওয়ালের ঠিকানা

আমাকে তুই বলেছিলি প্রায় দেওয়ালকে
শোনানোর মতো, 'আমি তো ওকে বলেছি;
আমার জন্য একজন আছে!আই আই টি-আন।'


তবু সে তোর জন্য কল্যাণী থেকে বর্ধমান স্টেশনে
এসে বসেছে। একসাথে বাড়ি যাবে বলে, অপেক্ষা
করেও, দেখা না পেয়ে ;মধ্যরাতের গোমো
প্যাসেঞ্জার ধরে ;বাড়ি ফিরে গিয়ে; রাত জাগা
সরলা মাকে গুনে গুনে মিথ্যা বলেছিল হতভাগা
অথবা ঈর্ষণীয় বন্ধু হে আমার!


তুই আমাকে বলেছিলি প্রায় দেওয়ালকে
শোনানোর মতো, আমি বাড়ি না থাকলেও ও
আমাদের বাড়ি এসে মা-বাবার সঙ্গে গল্প করে ,
আমি বাড়ি ফিরে যাবার পর ও বাড়ি ফেরে।আমার চাপ পড়ে।'
আজকাল কথায় কথায় যখন সবাই বলে," চাপে আছি " ; 

আমার ,তোর কথা খুব মনে পড়ে ; জানি তোর চাপ ঠিক আজকের 'চাপের' মতো ছিল না।


তুই আমাকে বলেছিলি প্রায় দেওয়াল কে শোনানোর মতো ;

দু'জনকেই ভালোবাসি, বিশ্বাস কর ,মন থেকে; কিন্তু শরীর তো একটাই!
তোর নাম বলছি না নিশ্চিত নাতির ঠাকুমা এখন,
এখনো সুন্দরী নিশ্চয়ই ;এখনো কি চাপে আছিস?


দেওয়াল কে শোনানোর মতো এখন যদি 'ওয়ালে'
শোনাতে পারিস! আমি অপেক্ষায় আছি। আমার
ঠিকানা জানা এখন খুব সোজা । তাহলে আবার একবার তোদের, চল জুড়ে দিয়ে আসি।।


যখন তিনি রবীন্দ্রনাথ
আমাকে টপকে প্রযোজকের সামনের চেয়ারে বসে যে মেয়েটি বলেছিল সময় পেলাম না, তাড়াতাড়ি লিখতে হলো রেডিও টক্ টা । দেখবেন একটু ?
প্রযোজক লেখার পাতাগুলো সামনে ঠেলে দিয়ে বললেন:কালান্তরের মত একটি লেখা লিখে নিয়ে এসো
এক মাস সময় দিলাম।
বেলুনের মতো চুপসে যাওয়া মুখ, সমস্ত স্মার্ট হাসি
শরীরী ভঙ্গিমা ডুবে গেল মূহুর্তের হৃদ্গঙ্গায়।
গমগমে গলায় কলেজের প্রাক্তন ছাত্র অজিতেশ
বলছিলেন ,রক্তকরবীর রাজা কে চেনো?
কার এন্ড টেগর
কোম্পানির 'দ্বারকানাথ ঠাকুর' পুরো কয়লা খনির গল্প
তারপর যতবার ঈশানী পাড়ার নন্দিন এর গলা শুনেছি তৃপ্তির মিত্রের কন্ঠে, 

ততবার কোলিয়ারির ধাওরায় ধাওরায়

ভেসে আসা অজস্র গলার সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছি।
অনেক পুরনো লং প্লেয়িং ডিস্কে চড়িয়ে, উদয়ন ঘোষ
গীতবিতান হাতে ধরিয়ে , বলেছিলেন ;
প্রতিটি কমা পূর্ণচ্ছেদ সহ গানটি শোনো।
আকুল আবেদন মর্মে পৌঁছে গেলে বলেছিলাম," কি জিনিস শেখালেন স্যার!
বিন্দুমাত্র কৃতিত্ব দাবি না করে বললেন , এসব গুরু পরম্পরা বিদ্যা, 

আমাকেও শিখিয়েছিলেন আচার্য সুকুমার সেন।



সাহিত্যের ছাত্রী তাই যাদবপুর জিজ্ঞেস করেছিলাম অনুগত
শিক্ষার্থীর মত উত্তরাধুনিকতা একটু সরল করে বোঝাবে ?
হাসিমুখে বলে গেছিল,দয়া দিয়ে চরণ ধোয়া যায়!
আলোক ঋণে ঋণী করবেন কিভাবে ?
আর বোঝার চেষ্টা করিনি ।সে যে আমার প্রাত্যহিক রবীন্দ্রনাথ।


এক গভীর রাতে শান্তিনিকেতনে বহু উপন্যাসের জনক কে ক্লান্ত আঙ্গুলগুলোকে মুঠো করে মুঠো
খুলতে খুলতে বলতে শুনেছিলাম :শাপভ্রষ্ট দেবতা নাহলে এত লেখা আর কি কেউ
লিখতে পারে ?
অথচ যৌবনে তিনি বলেছিলেন "তিন জোড়া লাথির ঘায়ে রবীন্দ্ররচনাবলী লুটোয় পাপোশে।


তারপরও অনেকক্ষণ থেমে জ্যোৎস্নাঢালা শান্তিনিকেতনে গেয়েউঠেছিলেন


"রবি যায় অস্তাচলে আঁধারে ঢাকে ধরণী
করো কৃপা অনাথে হে বিশ্বজনজননী...


৪টি মন্তব্য: