সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

জয় গোস্বামী৷৷ ২৫ অক্টোবর, ২০১২

মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ৫।। ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০  




জয় গোস্বামী৷৷ ২৫ অক্টোবর, ২০১২


একবার আকাশ আর দু’বার আকাশ আর তিনবার আকাশ
এইভাবে সতেরো বছর 
তারপর ক্রমাগত শেষ হয় আলো
সমুদ্রের দিকে ফেরে রক্তমাখা জ্বর
লোহাপাথরের শব্দ ঢুকে পড়ে মনের ভিতর
সেই অবকাশে
হাড়ের অন্দরে কীট একদিন দু’দিন তিনদিন
খেতে থাকে সব স্নেহঋণ
কীটদল ক্রমশ অঙ্গার
জ্বালা শুধু জ্বালা শুধু জ্বালা
যতটুকু নীল ছিল পুড়ে ছারখার
বড় হল আমার-ই অহং
অন্যের কারণে শুধু অন্যের কারণে অন্যদের কারণে কারণে
একদিন তোমার কাছ থেকে 
সম্পূর্ণ ফিরিয়ে আনলাম
মন৷

তুমি কিছু বলোনি তখন৷
স্মিত হেসেছিলে শুধু৷
পোড়া একটা হাওয়া উঠল৷ কালো জল ঘূর্ণিপাক মেরে
উঠে গেল আমার মাথায়
যেদিকে তাকাই দেখি বিষ ভেসে যায় শুধু বিষ ভেসে যায়
সেই বিষস্রোত ধরে এতদূর এসে পৌঁছলাম
রইল না ফেরার উপায়
যা হল তা হয়ে গেল৷ দিন গেল একের পর এক

বিরোধিতা করলাম অনেক৷
তোমার সুস্পষ্ট বিরোধিতা৷
আজ তোমার মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে
মনে হয় ভুল-ই করেছি৷ মনে হয় সমস্ত কারণই অকারণ
সজোরে সমূহ বাধা ঠেলে একবার সামনে গিয়ে যদি বসতাম
একবার পা ছুঁতাম যদি
আবার আগের মতো পা ছুঁতাম যদি...

কিন্তু তা হওয়ার নয়৷ তুমি রইলে না
মানুষের মুখে মুখে রয়ে গেল আমাদের মধ্যেকার সেই বিষনদী
তুমি যে-স্নেহের ডালা হাতে দিয়েছিলে
তা কবেই ভেসে গেছে রক্তমাখা অহং-এর জ্বরে
সমুদ্র ছাপিয়ে যাওয়া তোমার নামের পাশে 
আমার ধূলিকণার নাম
শোকের সুযোগ পায় না---
অনুশোচনায় পুড়ে মরে

(সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর কবিতাটি ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়৷ পরবর্তীতে জয় গোস্বামীর ‘কবিতা সংগ্রহ’ ৫ম খণ্ডে সংকলিত হয়৷ এখানে জয় গোস্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে কবিতাটি পুনঃপ্রকাশিত হল৷ কবির দ্বিধা, মৃত্যুদিনে লেখা কবিতা কী জন্মদিনে প্রকাশ করা যায়!)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন