শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২০

অগ্রন্থিত রচনা ।। অরুণেশ ঘোষঃ ফ্রানৎস্ কাফকার ভাবশিষ্যের সন্ধানে অথবা নাড়ুদার খেরোর খাতা

মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ৪।। ২৯ আগষ্ট, ২০২০


অগ্রন্থিত রচনা 

অরুণেশ ঘোষ ।। ফ্রানৎস্ কাফকার ভাবশিষ্যের সন্ধানে অথবা নাড়ুদার খেরোর খাতা



মদ= অহং৷
গাঁজা= আত্মমগ্ণতা৷
ভাঙ্= যৌন সহবাসের ক্ষমতা বৃদ্ধি৷
এ সম্পর্কে গ্রাম্য ছড়াও রয়েছে,যার মর্মার্থ : ভাঙ্গের নেশার পর সহবাসে নারীকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দেওয়া যায়৷
অফিস= সরাসরি সঙ্গমে অক্ষম বুড়ো-বুড়িদের স্বপ্ণিল হাহাকার৷ 
সিদ্ধি= অবান্তর কথা,অকারণ হাসি৷
চরস্= শুরুতে চপেটাঘাত,শেষে মূত্রপাত৷
কোকেন= আত্মহননের প্রবল বাসনা৷
ময়না ফল= সঙ্গমেচ্ছা ও বমনেচ্ছা৷
ধুতুরা= উধর্বমুখী পায়ুদ্বারা সূর্যবন্দনা৷

[এ প্রসঙ্গে আমার একটি অভিজ্ঞতার কথা এখানে লিখে রাখছি আমি এক সময় ওস্তাদ নেশাখোরদের খোঁজে গ্রাম থেকে গঞ্জে, গঞ্জ থেকে নগরে ঘুরে বেড়িয়েছি৷ নিছক কৌতূহল বশে নয়, আমার ইচ্ছা ছিল এইসব নেশাখোরদের আচার-আচরণ জীবন-যাপন সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য লিপিবদ্ধ করা, সে আর হয়ে ওঠে নি৷ সে যাই হোক, সে সময়ে আমি শহর থেকে বহুদূর দূরবর্তি একটি গ্রামে ‘পুটকি উদাঙ্’ (খোলা পাছা) নামে এক মহা ওস্তাদ নেশাখোরের দেখা পেয়েছিলাম৷ সে শীতের সকালে ধুতুরার নেশা করার পর বিবস্ত্র পশ্চাদ্দেশটি সূর্যের দিকে তুলে ধরে মাথাটি মাটিতে ঠেকিয়ে স্থির হয়ে ছিল৷ আমার দিকে মুখ তুলে তাকায়নি আর কোনও কথার জবাবও দেয়নি৷ লোকজনের কাছে শোনা গেল, সে নাকি এভাবেই দুপুর অব্দি থাকে৷ ...এটাকেই আমি উধর্বমুখী পায়ুদ্বারা সূর্যবন্দনা বলে বোঝাতে চেয়েছি]


প্রিয় পাঠক,উপরের পুরো লেখাটি আমার নয়৷ এ হল নাড়ুদা তথা আমাদের এলাকার সাধারণ একজন ভবঘুরে তথা নেশাখোর তথা গেঁজেল নাড়ু ভাঙ্গীর৷ যারা গাঁজা-ভাঙ্গের নেশায় আসক্ত তাদের এ অঞ্চলে বলা হয় ভাঙ্গী৷ নাড়ুদা কোথা থেকে এসেছে--- কী সমাচার কেউ জানত না৷ ব্যক্তিগত সব প্রশ্ণের উত্তর নাড়ুদা কখনই দিত না৷ মানুষজন শেষদিকে তাকে আর বিরক্তও করত না,নাড়ু ভাঙ্গীর অতীত জীবন জানার জন্য কৌতূহল দেখাত না৷ সে সাধারণ হয়েও ছিল অসাধারণ৷
নাড়ু ভাঙ্গী যে উচ্চশিক্ষিত এটি টের পাওয়া যায় ছোট্ট একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে৷
সদরে ইংরেজিতে দরখাস্ত লিখতে হবে কিন্তু লিখবেটা কে? সময়টা তো আজ থেকে ৫০ বছর আগের কথা,আমাদের (যারা দু-একজন পাশ করেছি সুকলের শেষ পরীক্ষায়) তো ইংরেজীতে দরখাস্ত লেখার কথা শুনেই পেটে মোচড় দিয়ে উঠেছে,ও পারব না বাবা৷ বাংলায় হলে কিছু একটা লিখে দিতে পারি৷ গাঁয়ের মাতববর পড়েছে মুশকিলে,ইংরেজী জানা মুহুরীও নেই আশে পাশে৷ এদিকে ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব সরেজমিনে তদন্ত করতে আসবেন সকাল ১০টায়৷ নদীর ওপরের ভাঙা পোলটার একটা ব্যবস্থা এবারই করতে হবে৷ সেটা দেখতে৷ নাড়ু হঠাৎ বলে উঠল,দিন তো দেখি আমায়,আমি লিখতে পারি কি না৷
অবশেষে নাড়ুই লিখল সুন্দর ও গোটা গোটা অক্ষরে ঝকঝকে একখানা দরখাস্ত৷
নাড়ু ভাঙ্গীর জীবন রহস্যের খানিকটা উন্মোচিত হল৷ ম্যাজিষ্ট্রেট সেই দরখাস্ত পড়ে বলেছিলেন, লোকটি কে? এখানে থাকে? ...আমার সঙ্গে একবার যেন দেখা করে যেন৷ নাড়ু যথারীতি দেখা করেনি, হেসেই উড়িয়ে দিয়েছে৷
আমি আর মৈনুদ্দি তখন সেই বয়সের ছোকরা যাদের নতুন শিং গজিয়েছে এবং যত্রতত্র সেই শিং-এর ধার পরীক্ষা করার জন্য মুখিয়ে আছি৷ অবশ্যই সেই শিং সাহিত্যের, আরও স্পষ্ট করে বলা যেতে পারে, বিশ্ব সাহিত্যের৷ আমাদের প্রিয় কবি শার্ল বোদলেয়ার ও জাঁ আর্তুর র্যাঁবো৷ প্রিয় লেখক ফ্রানৎস্ কাফকা ও আলবেয়ার কাম্যু৷ খানিকটা বাংলা অনুবাদ,খানিকটা ইংরেজি অনুবাদে পাশে আবার একটা ডিক্শেনারি নিয়ে কী আগ্রহে,কী গভীর মনোযোগে পড়া৷ সেই ‘পড়া’ যে কী বস্তু যে পাঠক সাহিত্যকে পাগলের মত ভালবেসেছে,সেই বুঝবে৷ সে তো ‘পড়া’ নয়, গ্রন্থটির মধ্যে ঢুকে পড়া আর তার চরিত্রদের সঙ্গে,তার স্রষ্টার সঙ্গে এক ভিন্নতর অভিযাত্রা৷ সেখানে ভাষা,দেশ,কাল কোনও অন্তরায়ই নয়,সব তুচ্ছ! ---
আর পাঠক হয়ত ব্যঙ্গের সুরেই বলবেন,ওই গন্ডগ্রামে বিদেশী বই-পত্র পেলে কোথা থেকে হে ছোক্রারা?
আমাদের এক বন্ধুর বাবা বলতেন,মনপ্রাণ দিয়ে ভগবানকে ডাকলে তার দেখা পাওয়া যায়, আর একটা রক্তমাংসের নারীকে ভজনা করলে,যে যত সুন্দরী হোক,তাকে পাওয়া যাবে না,এটা একটা কথা হল?
আমরা তাঁর ঐ ‘নারী’ শব্দটির জায়গায় ‘বই’ শব্দটি বসিয়ে নিতাম,আমাদের প্রিয় ‘রক্তমাংসের গ্রন্থ’৷ মনপ্রাণ দিয়ে যে বই চাইব,তাকে অবশ্যই পাব,এমন স্থির বিশ্বাস ছিল৷ শহর ও শহরতলীতে দিকপাল পড়ুয়াদের বাড়ির লাইব্রেরিতে হানা দিতাম দুজনে,আমাদের এমন বই নিয়ে পাগলামি দেখে অনেকে হেসে দিয়ে দিতেন বই৷ যেমন সেলস্ ট্যাক্সের অফিসার বিশাল বপুর অধিকারী মহান মানুষ পি.কে.ভঞ্জ৷ তিনি আমাদের দান করলেন জেমস্ জয়েস, সাঁর্তের এবং কাফকা আর প্রতিবার কলকাতা যাওয়ার আগে বলতেন,কোন কোন বই লাগবে তার একটা লিষ্ট করে দাও৷....
আমাদের আর পায় কে৷
যা হোক,নাড়ু ভাঙ্গী তথা আমাদের প্রিয় নাড়ুদার কথায় আসা যাক৷ নাড়ুদার আস্তানা ছিল হরিদাস সাহার পরিত্যক্ত গুদাম ঘরে,চটবস্তার উপর একটা মোটা খদ্দরের চাদর,ছেঁড়া ময়লা মশারি,একপাশে কেরোসিন কুকার ও রান্নার সরঞ্জাম৷ হাতা,খুন্তি,কড়া ও ডেকচি৷ নাড়ুদা নিজের হাতে রান্না করে খেতো৷ আর এসবই হাটখোলার বড় ব্যবসায়ী হরিদাস সাহা তাকে দিয়েছেশুধু তাই নয়,প্রতিদিনের চাল-ডাল-তেল-নুন-আনাজ-পাতি হরিদাসের লোক এসে দিয়ে যায় নাড়ুদাকে৷ হরিদাস সাহার বিশ্বাস, নাড়ু ভাঙ্গি তার ভাঙ্গা গুদাম ঘরে বাসা বাঁধার পর থেকেই তার ব্যবসাতে প্রভূত উন্নতি হয়েছে৷ হরিদাস তাকে দেবতাজ্ঞানে ভক্তি করে৷
আর আমরা হয়ে গেলাম নাড়ুদার ন্যাওটা৷
তাই ফাই-ফরমাজ খাটি,তার জীবনের-রহস্য জানবার জন্য অদম্য কৌতূহল আমাদের৷ এমন একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষ কী করে ছন্নছাড়া-ভবঘুরে হয়ে গেল! কথাবার্তার ফাঁক ফোঁকর দিয়ে যদি নাড়ুদার গোপন অতীত একটু বেরিয়ে আসে তাহলেই আমরা তাকে চেপে ধরব,নাড়ুদা খুলে বল না নিজের কথা৷ নাড়ু কিন্তু দারুণ সতর্ক,নিজের সম্পর্কে কোনও কথা ভুলেও মুখে আনে না,বলে অন্যের কথা,শোনায় আমাদের তার ভ্রমণবৃত্তান্ত,বিচিত্র সব মানুষের কথা৷...
কিন্তু আমাদের জন্য যে পরম বিস্ময় অপেক্ষা করে আছে অন্য জায়গায় সেটা আমরা কী করে বুঝব৷
এক দুপুরবেলা রান্নাবান্না শেষে নাড়ুদা গেছে আধমাইল দূরের নদীতে স্নান করতে৷ নদী থেকে স্নান করে ফিরতে নাড়ুদার এক-দেড় ঘন্টার কম লাগে না,সেদিন আবার হরিদাস সাহা পাঠিয়ে দিয়েছে কাপড় কাচার সাবান,সেই সাবান নিয়ে গেছে নদীর ঘাটে,কাপড়-চোপড় কেচে তবে ফিরবে,সময় তো লাগবেই৷


আমরা আঁতি-পাতি করে নাড়ুদার ঘর খঁুজছি,যদি একটা চিঠিও পাওয়া যায় তাহলেও নাড়ু-রহস্য কিছুটা হলেও উদ্ধার করতে পারব৷
হঠাৎ মৈনুদ্দির চাপা গলার চিৎকার,ইউরেকা৷ পেয়ে গেছি৷
তার হাতে একটা খেরোর খাতা,পেয়েছে বিছানার চট-বস্তার গোপন গহ্বর থেকে৷
শুধু সেই খেরোর খাতা নয়,এক এক ক’রে বেরুল,কাফকার গদ্য-সংকলন,চিঠিপত্রের সংকলনের ভল্যুম,কাফকার উপর লেখা মোটাসোটা গ্রন্থ আর অক্সফোর্ড অভিধান একটি,এসব যে গোপন সম্পদ নাড়ুদার তাতে কোনও সন্দেহ নেই,তবে তার সেইসব বইপত্রকে চটের তলায় রেখে মাথার বালিশ হিসেবেই ব্যবহার করত নাড়ুদা৷ প্রিয় বস্তু তো মাথায় করেই রাখতে হয়৷
আমরা,অর্থাৎ আমি মৈনুদ্দি কিন্তু দিশেহারা৷...
নাড়ুদার বইপত্র আর খেরোর খাতা নাড়াচাড়া করে যেটা বোঝা গেল,সে হল এই : নাড়ুর প্রিয় লেখক ফ্রানৎস্ কাফকা,তাকে কাফকার ভাবশিষ্যও বলা যায়৷ অর্থাৎ যাকে আমরা খঁুজছিলাম সে ছিল আমাদের ঘরের কাছেই,নাগালের মধ্যে৷ ঘুণাক্ষরেও বুঝিনি আমরা৷
অবলীলায় নাড়ুদার বই ও খেরোর খাতাটি আমরা চুরি করতে পারতাম,সেই দুষ্টবুদ্ধি যে মাথায় আসেনি,তা নয়,কিন্তু সেই ইচ্ছা বেশ কঠোর ভাবে দমন করেছি দুজনেই৷ জীবনে কিছু কিছু জায়গায়, কোনও কোনও ব্যক্তিমানুষের কাছে মাথা নত করতে হয়,শ্রদ্ধায় অভিভূত হতে হয়৷ নাড়ুদা সেই রকম একজন মানুষ৷
তবে একটা অপরাধ আমরা করেছি৷
নাড়ুদার অনুপস্থিতিতে তার খেরোর খাতা থেকে যতটা পারা যায় টুকে নিয়েছি৷ লেখার শুরুতেই যার কিছু নমুনা পাঠককে উপহার দিয়েছি৷ বস্তুত খেরোর খাতাটিতে নাড়ুদার কোন দিনলিপি ছিল না,ছিল না অতীত জীবন নিয়ে কোনও সঙ্কেতপূর্ণ লেখা,যা ছিল তা ছোট ছোট গল্প--- ‘গসপেল’ জাতীয়, সহজেই কাফকাকে মনে পড়ে যায়৷ যদিও সেসব লেখা সম্পূর্ণ মৌলিক,নাড়ুদার নিজস্ব লেখা, পড়া মাত্র বুঝেছি৷
খুবই তাড়াহুড়া ক’রে সে সব লেখা আমাদের টুকে নিতে হয়েছিল তাই তার দু-তিনটি পাঠকের জন্য তুলে দিচ্ছি :


১. একটি সাধারণ নরবলির ঘটনা


গল্পটি আমি শুনেছিলাম পিতামহের কাছে৷ পিতামহ আবার শুনেছিল তার পিতামহের কাছে৷
গল্প নয়৷ সত্য ঘটনা৷ ঠাকুরদা বেশ গম্ভীর স্বরেই বলেছিলেন,এরকম নরবলি একটা সময়ে আকছারই দেওয়া হোত--- শুধু একটু গোপনে৷ এই যা৷
এক্ষেত্রে নরবলির ঘটনাটা কিছুটা আলাদা৷ বলি দেওয়ার জন্য যাকে বাছা হয়েছিল তিনি একজন সুদর্শন ব্রাহ্মণ যুবক তদুপরি একজন ঘোরতর নাস্তিক, কালীসাধক ভূতনাথ ও জমিদার অঘোরনাথ পর পর তিন রাত্রি স্বপ্ণ দেখেছিল,গাঁয়ের এই বিদ্রোহী যুবকটিকে ‘মা’ আকুল ভাবে আকাঙ্ক্ষা করছেন৷ তখনই পুরোহিত ও জমিদার মিলে স্থির করে,যুবকটিকে মায়ের কাছে উৎসর্গ করা হবে৷ 
তাঁকে ধরা হয় এবং জমিদারের প্রাসাদের একটি গোপন কুঠুরিতে বন্দী করে রাখা হয়,যতদিন না নির্দিষ্ট অমাবস্যা তিথি না আসে৷
যথারীতি সেই অমাবস্যা তিথির গভীর নিশুতি রাত্রিতে শ্মশানকালীর সম্মুখে তাঁকে আনা হয়৷ তাঁর হাতদুটি পিছমোড়া দিয়ে বাঁধা ছিল মাত্র,সে কোনও চিৎকার করা বা নিজেকে ছাড়াইয়া লইবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করে নাই৷ করিয়া কোন লাভ হইবে না বলিয়া৷
শ্মশানকালীর সম্মুখে নিয়ে এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল,তার শেষ ইচ্ছা কী৷
যুবক নীরব ছিল৷
এমন কি হাঁড়িকাঠে স্বেচ্ছায় সে গলা পাতিয়া দিয়াছিল৷ তখনও পুরোহিত জিজ্ঞাসা করেছে,তার শেষ ইচ্ছা কী?
ঠিক সেই সময়ে যুবক মধ্যরাত্রির স্তব্ধতাকে খানখান করে চিৎকার করে ওঠে,আমার হাতের বাঁধন খুলে দাও৷ আমি দেবীকে একবার প্রণাম করব৷ উপস্থিত সকলে চমকিত ও বিস্মিত হয়৷ মৃত্যুর আগমুহূর্তে সে যদি আস্তিকও হয় তবু তার নিস্তার নাই সকলে জানত,সম্ভবত যুবকও সে কথা জানে৷ যা হোক,পিছমোড়া দিয়ে বাঁধা হাত দুটি খুলিয়া দেওয়া হল৷ যুবক,দেবী তথা ভয়ংকরী কালীমূর্তির সামনে গিয়া দুই বাহুতে মৃন্ময় মূর্তিকে জড়াইয়া ধরিল এবং একাদিক্রমে তাহার লেলিহান জিহ্বায় ও ওষ্ঠাধরে,দুই স্তনে আর নাভিদেশে প্রগাঢ় চুম্বনশেষে বীরদর্পে পুরোহিত,ঘাতক ও জমিদারের কাছে ফিরিয়া আসিল৷ সকলেই বিমূঢ়!
মাটিতে বুক পাতিয়া স্বেচ্ছায় সটান হাঁড়িকাঠে মাথা দিয়া বধ্য খাঁড়া-হাতে-দাঁড়িয়ে-থাকা ঘাতককে নির্দেশ দিল,হ্যাঁ৷ এখন আমার মুণ্ডুচ্ছেদ কর৷ আমাকে হত্যা কর৷
পিতামহ গভীর রাতে চলিত ও সাধু ভাষায় মিশিয়ে এই সত্য ঘটনার বিবরণ আমাকে শুনিয়েছিলেন৷ কৈশোরে আমি তাঁর সঙ্গেই ঘুমাইতাম ও গল্প বলার জন্য আব্দার করতাম৷
‘এইবার ঘুমাইয়া পড় অনেক রাত হয়েছে’৷ বলে দাদু পাশ ফিরে শুয়ে পড়েছে৷ কিন্তু সেই কিশোরের আর কি ঘুম আসে!


২. জীবনের অনুরূপ বা ‘সংসার-সংসার’ খেলা


কৈশোরে আমি একদল ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে উপরিউক্ত খেলায় অংশ নিয়েছিলাম৷ সবারই বয়স ৮ থেকে ১২-র মধ্যে৷ গ্রীষ্মের একটি দুপুরে বাড়ির বড়রা যখন দিবানিদ্রায় মগ্ণ তখনই পেছনের ঝোপ জঙ্গলের আড়ালে একটি ছায়াময় গোপন স্থান বেছে নেওয়া হয়েছিল৷
বয়সে যে সবার থেকে বড় তাকে আমরা রাঙাদি বলে ডাকতাম,সে-ই খেলার পরিচালনা করছিল, খঁুটিনাটি সব নির্দেশ দিচ্ছিল৷ সাদামাটাভাবে যাকে বলা যায় বড়দের অনুকরণ করা৷ অবশ্য আমাদের খেলাটি তার চেয়েও গভীর ও ভিন্ন মাত্রা পেয়েছিল৷ যার পরিণতি হয় ভয়াবহ৷ 
অনেকেই শৈশবে ‘রান্না-বাটি’ খেলা খেলেছেন নিশ্চয়ই৷ আমাদের খেলাটি রান্না-বান্না দিয়েই শুরু হয়েছিল,ক্রমশ তা জীবনের জটিলতর আবর্তের দিকে বাঁক নেয়৷ অর্থাৎ রান্না-বান্না,বাজার করা,পাটকাঠি ভেঙে বিড়ি-সিগারেটের মত করে টানা,বড়দের মত ভারিক্কী চালে কথাবার্তা বা তর্ক আর ঝগড়াও অভিনীত হল৷ আমরা ছিলাম জোড়ায় জোড়ায়,স্বামী-স্ত্রী হিসেবে৷ আমার স্ত্রী ছিল সেই রাঙাদি, যে কি না আবার গোটা শিশুপরিবারের কর্ত্রী৷ 
তারপর তো ধূলোর ভাত,লতাপাতার ব্যঞ্জন ইত্যাদি খাওয়ার অভিনয় করা এবং তারপর রাত্রি৷ জোড়ায় জোড়ায় ঘাসের উপর শুয়ে পড়া৷ রাঙাদির কঠোর নির্দেশ,শুধু ঘুমের ভান করলে চলবে না,রাত্তিরে বড়রা যা করে সেটিও করতে হবে৷ অর্থাৎ সঙ্গম৷ সে টেনে টেনে সবার ইজের খুলে দিয়ে শুরু করতে বলল৷ ব্যাপারটি সবারই জানা তবে দু-একজন খিক্-খিক্ হেসে ওঠা মাত্র রাঙাদির কড়া ধমক৷ নিঃশব্দে সহবাসের প্রক্রিয়া চলতে লাগল৷ রাঙাদি আমাকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করতে বলল আর আমার পুরুষাঙ্গ তার শরীরের মধ্যে ঢুকিয়ে নিল,এই এভাবে না,গর্দভ কোথাকার,হ্যাঁ এভাবে... এরকম ক’রে উম্ম্...৷ ...এ পর্যন্ত সবই ঠিকই ছিল৷
কিন্তু বিপদটা হল শেষে৷ রাঙাদি হঠাৎ কুঁজো হয়ে লাঠি ভর দিয়ে হাঁটতে শুরু করল মানে সে বুড়ো হয়ে গেছে৷ তারপর সে চিৎপাত হয়ে শুয়ে ছটফট করতে লাগল৷ হাতের ইশারায় কাছে ডাকল সবাইকে৷ আমরা সবাই তার মুখের দিকে ঝঁুকে পড়ে কান্নাকাটির অভিনয় শুরু করলাম৷ কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, রাঙাদির বুক ওঠা-নামা করছে না,গোটা শরীর বরফ-শীতল হয়ে গেছে,চোখের মণি স্থির৷ সত্যি সত্যি রাঙাদি মরে গেছে৷ আতঙ্কে নীল হয়ে যাওয়া বাচ্চারা যে যার মত ছুটে পালাল--- শুধু আমি বাদে৷ সদ্যস্তন ওঠা সেই ১২ বছরের কিশোরীর সুন্দর ও মৃত শরীরের কাছে বসে থাকলাম স্থির হয়ে--- যতক্ষণ না বড়রা কেউ এসে আমাকেই অভিযুক্ত করে!


৩. নিরপরাধীরাই মূল অপরাধী


কচি-কাঁচাদের আসরের বার্ষিক সম্মেলনে আমাদের ছোট গঞ্জ-শহরটির শাখা সংগঠনটিও যোগ দিয়েছিল৷ আমিও তাদের সঙ্গে ছিলাম৷ আমার বয়ক্রম তখন মাত্রই ১২৷
বয়স অল্প হলেও কৌতূহল ছিল আমার অসীম৷ অভিজ্ঞতার দিক থেকে আমি ছিলাম যুবক,যদিও আমার শান্ত-ধীর-স্থির আচরণের জন্য অন্যদের কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারতাম৷
১৬ জন ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমাদের ‘পাহাড়গঞ্জ কচি-কাঁচাদের আসর’৷ আর দাদা তথা শিক্ষক দুজন,একজন মন্টুদা,অন্যজন হাফিজদা৷ দুজনের বয়স ২৫/২৬৷ এই ১৮ জন দিয়ে আমাদের টিম৷ দাদারা আমাদের নাচ,গান,আবৃত্তি,ব্রতচারী শেখাত,মাঝে মধ্যে স্বরচিত পদ্য বা ছড়া পাঠেরও আসর বসত৷ ...এটা ওপরের দিক,আলোকিত অংশের দিক৷ সবকিছুরই যেমন একটা অন্ধকার দিক থাকে,‘কচি-কাঁচাদের আসরে’রও ছিল৷ সেই অন্ধকার দিকটা প্রত্যক্ষভাবে জানার জন্য,দেখার জন্য মরীয়া হয়ে উঠেছিলাম আমি৷
হফিজদা আর মন্টুদা ছিল উন্মত্ত সমকামী৷ বিশেষ করে হাফিজদা আর হাফিজের প্রভাবে মন্টুও হয়ে ওঠে একজন পাকা শিকারী৷ ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাই তাদের শিকারের লক্ষ্যবস্তু ছিল৷ এটা কিশোর কিশোরীদের মধ্যেও সংক্রামিত হয় দ্রুত৷ তারা গোপনে একে অপরের সঙ্গে সমকামে প্রবৃত্ত হত৷
যা হোক,সেই বার্ষিক সম্মেলনের কথা বলি৷
জেলাশহরের একটি সুকলে সেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে৷ আসরের রাজ্য সম্পাদক তথা প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং আসবেন৷ আমাদের প্রত্যেককে সতরঞ্চি-চাদর-বালিশ ও মশারি নিয়ে সেই সুকলপ্রাঙ্গনে দুপুরের মধ্যে হাজির হতে হবে৷ ১০ টাকা করে চাঁদা সবার কাছ থেকেই নিয়ে নেওয়া হয়েছিল৷
প্রথমে ভেবেছিলাম,আমি যাব না৷
সমকামিতাকে আমি আন্তরিকভাবে ঘৃণা করতাম৷ আমার গায়ে হাত দেওয়ার সাহস ওরা পায়নি৷ কিন্তু বার্ষিক সম্মেলনের হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে ওরা যদি আমার উপর চড়াও হয়৷ এরকম আশঙ্কায় দ্বিধা একটু ছিল, দ্বিধা কাটিয়ে উঠে অবশেষে গেলাম সেখানে৷
নাচ,গান,নাটক,খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির পর প্রত্যেক শাখা সংগঠনের জন্য বরাদ্দ ক্লাশরুমে ঢুকে গেল ঘুমাবার জন্য সবাই৷ আমরা মেঝের উপর সতরঞ্চি পেতে,চাদর বিছিয়ে নিয়েছি,কেউ মশারি টাঙিয়েছে, কেউ টাঙায়নি৷ ঘরের বড় বড় জানালা,জানলায় কোনও শিক ঠিক নেই৷ দরজার হুড়কোও নেই শুধু ভেজিয়ে দেওয়া হল৷ তখনকার দিনে ক্লাশরুমে সিলিং ফ্যানের বালাই ছিল না৷ আলো নিভিয়ে দিতেই খোলা জানালা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল একরাশ জ্যোৎস্না তার সঙ্গে হু হু বাতাস৷ সময়টা ছিল বসন্তকাল৷
সব বিছানায় জোড়ায় জোড়ায়,আমি শুধু একা৷ দমবন্ধ করে আছি বলা যায়,কখন শুরু হবে সমকামের উৎসব৷ আবার আমিও প্রস্তুতও হয়ে আছি,আমার উপর কেউ চড়াও হলে একটা হেস্ত নেস্ত হয়ে যাবে৷ অবশ্য আমার দিকে কারুর ভ্রূক্ষেপ ছিল না৷
আমার বিছানার পাশেই সমকামী-সম্রাট হাফিজ আলী আর তার শয্যাসঙ্গী নয় শষ্যাসঙ্গিনী হল সীমা, যার বয়স ১৬-র কম হবে না৷ কী আশ্চর্য! লোকটা শুধু সমকামী নয় উভকামীও বটে! ---ভাবছিলাম৷ 
কিন্তু আমার ভুল ভাঙল একটু পরেই৷
নির্ভুল জ্যোৎস্নালোকে দেখলাম,মেয়েটিকে উপুড় ক’রে তার পায়ুপথেই সঙ্গম করার চেষ্টা করছে হাফিজ৷ সীমা কিন্তু মুখে ‘উঁ-আঁ’ শব্দে প্রবল আপত্তি তুলে ঝট্ ক’রে চিৎ হয়ে পা দুটো ভাঁজ ক’রে পদ্ম পাঁপড়ি-সদৃশ মেলে ধরছে,যার অর্থ পায়ুতে নয় হে নির্বোধ, যোনিতে গমন কর৷ কিন্তু যতবার চিৎ হচ্ছিল সীমা ততবারই দুহাতে এক ঝটকায় উপুড় করে নিচ্ছিল তাকে হাফিজ৷ না না যোনি নয়,পায়ুই পরম পথ, রে মূর্খ নারী৷ তার স্নিগ্দ মুখমণ্ডল জ্যোৎস্নালোকে নিঃশব্দে এই কথাই বলছিল৷ আমি হাফিজ আলীর এই নিষ্ঠা ও পায়ুপ্রেমে চমৎকৃত হয়েছিলাম৷ 
এইরূপে যখন নানারকম চাপা শিৎকারধবনিতে আর নানাভঙ্গিতে সমকাম উৎসবে আন্দোলিত-উচ্ছ্রিত-উন্মত্ত জ্যোৎস্নায় অন্ধকারে আচ্ছাদিত গোটা ঘর তখনই ব্রজপাত হল৷
অর্থাৎ ঘরে আলো জ্বলে উঠল৷
আমি ছিলাম একমাত্র দ্রষ্টা,ঘুমের ভান করে দেখছিলাম,ধড়ফড় করে উঠে বসলাম মশারির তলায়৷
দেখি,রাজ্যসম্পাদকসহ আরও কয়েকজন স্তম্ভিত হয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে৷ বস্তুত,‘কচি কাঁচাদের আসরে’র দাদামণি ও আরও কয়েকজন কর্মকর্তা ঘর ঘরে আলো জ্বালিয়ে দেখছিলেন সকলের শোবার ব্যবস্থা ঠিক মতন হয়েছে কি না৷ হাজার হলেও এতগুলো শিশু-কিশোরের দায়িত্ব তাদের উপর৷ এ ঘরে এসে এমন দৃশ্য দেখবে তারা কল্পনাও করেনি৷ তারা নিঃশব্দে এসেছিল,নিঃশব্দেই প্রস্থান করল৷
সাংঘাতিক কিছু একটা ঘটতে চলছে এটা অনুমান করা মাত্র,সকলেই তাদের ব্যাগ-বিছানা সব ফেলে জানালা দিয়ে হুড়মুড় করে পালিয়ে যায়৷ একমাত্র একা আমি বসে থাকলাম আমার মশারির তলায়৷
হাতে লাঠি-রড ষন্ডামার্কা কয়েকজন ঢুকল ঘরে :
‘কোথায়,কোথায় শুয়োরের বাচ্চারা’?
‘পালের গোদাদুটোকে ধরতে হবে আগে’
‘ওদের গোয়ায় রড ঢুকিয়ে ইয়ে করার সাধ মিটিয়ে দেব,দাঁড়া’....
কিন্তু কোথায় কে,গোটা ঘর ফাঁকা,একমাত্র আমি চুপচাপ বসেছিলাম৷
‘সব পালিয়েছে,সব পালিয়েছে,গেল কোথায়’
‘ঐ একটা আছে,ওটাকেই ধরে নিয়ে চল,এ্যাই আগেই মারিস না দাদামণির কাছে নিয়ে চল,দাদামণিই বিচার করবে?’’
আমাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হল অফিসঘরে৷ দাদামণির কাছে৷ দাদামণি রক্তচক্ষু মেলে জিজ্ঞেস করে,‘সব গেল কোথায়?’
‘পালিয়েছে?’ 
‘তুই পালালি না কেন?’
‘আমি কিছু করিনি তো’
‘করিসনি তবে দেখেছিস তো’
‘হ্যাঁ’ মাথা-নিচু সায় দিলাম৷
‘এটাই তো বড় অপরাধ৷ দেখাটাই অপরাধ৷ যা বিছানা প্যাঁটরা কাঁধে করে এই মুহূর্তে বেরিয়ে যা৷’
‘আমার বাড়ি অনেক দূরে,দাদামণি’
‘যত দূরেই হোক৷ এত রাতে হাঁটতে হাঁটতে যাবি,এটাই তোর শাস্তি৷’...


এভাবে নাড়ুদার খেরোর খাতা থেকে কিছু লেখা কপি করে নিতে পেরেছিলাম৷ বলা চলে,‘দুরু দুরু বক্ষে’,একজন চাপা গলায় বলতাম,অন্যজন দ্রুত হাতে লিখে নিত আর বার বার উঁকি দিয়ে দেখতে হত নাড়ুদা আসছে কি না৷ নাড়ুদাকে আসতে দেখা মাত্র তার খাতা বই বিছানার তলায় যথাযথ ভাবে রেখে,সাধু সেজে বসে থাকতাম৷
কিন্তু যেভাবেই হোক নাড়ুদা টের পেয়ে গিয়েছিল,আমরা তার গোপন সম্পদের খোঁজ পেয়ে গেছি৷ এক সকাল বেলা গিয়ে দেখি,নাড়ুদা তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে গেছে৷ আমাদের জন্য রেখে গেছে কাফকার গ্রন্থাবলী,সঙ্গে নিয়ে গেছে তার নিজস্ব খেরোর খাতাটি৷ সেদিন দুজনে কেঁদেছিলাম আর তাঁকে কোনও দিন খঁুজে পাব না বলে৷


(এই অপ্রকাশিত রচনাটি ‘এবং বিকল্প’-র জন্য অরুণেশ পাঠিয়েছিলেন ২০১০-এর মাঝামাঝি সময়ে,‘এবং বিকল্প’ আয়োজিত জীবনানন্দ দাশের জন্মদিনের অনুষ্ঠান থেকে ফিরে গিয়ে৷ তাঁর আকস্মিক প্রয়াণের পর যখন ‘এবং বিকল্প’ পত্রিকার ‘অরুণেশ ঘোষ স্মরণ সংখ্যা’র প্রস্তুতি চলছে তখন কোনও এক অজ্ঞাত কারণে প্রেসের ফাইলে লেখাটি খঁুজে পাওয়া যায়নি৷ অথচ এই অপ্রকাশিত লেখাটি প্রকাশিত হবে বলে বিজ্ঞাপিত করা হয়েছিল অনেক আগেই৷ অনেকদিন পরে আচমকাই এক গ্রীষ্মদুপুরে ব্যক্তিগত লেখালিখির ফাইল-কাগজপত্রের মধ্যে থেকে উদ্ধার হয় লেখাটি৷ অরুণেশপুত্র নমিতেশ ঘোষের কাছে খোঁজ নেওয়া হয় ইতিমধ্যে এই লেখাটি অন্য কোথাও প্রকাশিত হয়েছে কি না৷ নমিতেশও কোনও সন্ধান দিতে পারেন নি৷ অতএব, এ সংখ্যায় লেখাটিকে অপ্রকাশিত রচনা হিসেবেই প্রকাশ করা হল৷ প্রসঙ্গত লেখার শেষে তারিখ দেওয়া আছে--- ২২/১০/২০০৯৷ এই তারিখটিকেই লেখাটির রচনাকাল ধরে নেওয়া যায়৷ যদিও আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন,যে কোনও সৃজনশীল লেখকের মতোই অরুণেশও একই রচনা ঘুরেফিরে লিখতেন নানান সময়ে নানান শিরোনামে৷ পাঠাতেনও বিভিন্ন পত্রিকায়৷'এবং বিকল্প' (জানুয়ারি ২০১৫) সংখ্যা থেকে রচনাটি অগ্রন্থিত রচনা হিসেবেই এখানে পুনরায় প্রকাশিত হলো। নমিতেশ জানালেন এখনও পর্যন্ত রচনাটি কোনও গ্রন্থভুক্ত হয়নি।   --- রাজীব সিংহ)



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন