মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ৪।। ২৯ আগষ্ট, ২০২০
কবিতাগুচ্ছ
মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া ।। চাঁদের পাথর…অহল্যা নাম
পাথর থেকে ভেসেছে জল ধ্যানের আড়ালে
অন্ধকার যেভাবে ভাসে চোখের পুকুরে
রাত্রি তার দীর্ঘতর আঙুল বাড়ায় যেই
হাওয়ার গহীন ছায়া লুকোয় ত্বকের মুকুরে
শাষনকল্যান দুই পুরুষ ইচ্ছেয়
বিবাহ ঋতু দুর্বাঘাস বেঁধেছে এই হাত
সামগানের প্রদীপ মৃদু জড়িয়ে রাখে দ্যুতি
অচেনা কোন হাহাকার জানায় ধু ধু রাত?
নৈঋতের আকাশ তবু পাঠালো বিদ্যুৎই
রাত্রি ছিঁড়ে সোনার সাপ জড়ালো পানপাতা
নিয়তি আর স্বপ্ন আজও বৃত্তাকারে ঘোরে
আয়তপথে কাজল দেন স্বয়ং দেবতা
বিছনভূমির কাজল মেঘ শর্তনির্ভর
জলের যেসব শর্তে আকাশ মাটিকে ভেঙে গড়ে
নিষেধ এবং সম্মতির টানা ও পোড়েনে
অনর্থক ইচ্ছে বুনি রাতের অক্ষরে
অপ্রেমের তপস্যায় ঢেকেছি পোড়া রূপ
স্তব্ধতার পাথরে কেবল জমেছে পোড়া ছাই
শুনেছি আমার শাপমুক্তি পায়ের স্পর্শে যার
তিনিও নাকি দেবতা, তবে পুরুষ দেবতাই!
সুপ্রভাত মেট্যা ।। স্নান ইচ্ছে
আর নয়, এবার আমাদের আনন্দ দেখাবার পালা ।বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ।খুশিতে ভরে উঠছে ঘর। হাওয়ায় নেচে উঠছে পাতা, রৌদ্র এবং ধুলো।দুঃখ কস্ট সরে যাচ্ছে দূরে । আর নয়, এবার শহর ছেড়ে আগেভাগেই এসে যাব ঘরে। তোমাকে ডাকব । ডেকে ঐশ্বর্য ভরিয়ে কবিতা লিখব কিছু ; যেহেতু গ্রামের রাস্তা এক টান দেওয়া সুতো , ফিরে আসতেই হবে.... তাইভতের নাম এলেই একটা স্নান ইচ্ছে জেগে ওঠে আমার দুপুরের গায়ে । তোমাকে পাই। আমার ক্ষুধা সরে যায় হৃদয় থেকে একটু একটু । একটা না বলা কথার কিছু শব্দ ফুটে ওঠে বুকে। আর ঠিক তখনই দেখি বর্ষা নামের বালিকা মেয়েটি, আমাদের কান্না ঝরা খুশি , ধানের হলুদ স্পর্শে আজ ভাস্কর্য নিপুন যেন গ্রাম হয়ে আসছে !
মধুছন্দা মিত্র ঘোষ ।। সাম্পান
উল্লেখযোগ্যহারে ডানা ঝাপটিয়ে
অজস্র সাঁতার, চই চই চই চই
জলের খোলস ভাঙতে ভাঙতে
হাঁসশিশুদের ডুব আমেজ
পালকগুচ্ছ থেকে পিছ্লোচ্ছে জলকনা
কচুরিপানার সবজে চমক
হাঁসছানাদের হিল্লোল, আশ্চর্য মেজাজে
সরে সরে যাচ্ছে কচুরিপানা
তিরতির গঠিত সাবলীল তরঙ্গ
জল সরে সরে যাচ্ছে
জল আবার জায়গা পেতে দিচ্ছে
শান্ত জলাশয়, চই চই চই চই
জলখেলায় যে ছানারা মেতে ছিল এতোক্ষণ
যোগ দিল হাঁস-মায়েরাও
জলের মায়াটানে
ডানা ঝাপটিয়ে, গলা তুলে হাঁস-মায়েরা
জল্ কে চল্ মিছিলে ভাসে
জলাশয় মাতিয়ে খানিক কুচকাওয়াজ
খানিক আনন্দ সাম্পান...
বিপ্লব চক্রবর্তী ।। বাজার-জাত
আমি বাজারে গেলেই তিনজন হয়ে যাই
চুপচাপ বেরোলেও বাকি ওরা এসে যায়
প্রথমজন আমার বোধ বড় খুঁতখুঁতে
সবার আগাপাশতলা জরিপ করে যায়
প্রিয় মানুষের কথার ভেতর দেখে শুধু
দ্বিতীয় জন-ই প্রয়োজন আমাকে খোঁজায়
আলুটা মুলোটা থলে ভরতে চায় পেলেই
দেদার খরচ করেন বাদশাহী মেজাজে
তৃতীয়জন আমি দুটোকে দুহাতে ঠেকিয়ে
রাখতে রাখতে অসহায় নত হয়ে পড়ি
পোশাকের আড়ালে শুধু আমার নড়াচড়া
একটা বেলুন আমাদের বাড়ি নিয়ে আসে
বেলুনে বসেই রসিকতা করে যায় বোধ
চাহিদা চুপচাপ আসামি থলে হাতে ঢোকে।।
লাবণ্য মণ্ডল ।। ভূতপূর্ব মানুষের আত্মকাহিনী
আমি প্রদ্বেষী, জন্মান্ধ দীর্ঘতমার বংশবৃদ্ধার্থে আমার জন্ম
তারপর অনেকেই আমাকে অনেক নামে ডাকে অসূর্যস্পর্শা, ললনা, রমনী, অর্ধাঙ্গিনী, জননী, মাগী...
নামহীনতার যুগে অবশ্য মানুষ ছিলাম, আমি।
ভলগা থেকে গঙ্গার চর চষে বেড়িয়েছি শিকারযন্ত্র হাতে
দিনশেষে বাটোয়ারা হয়েছে সবকিছু, বঞ্চিত করিনি কাউকে-নিজেকেও,
উদ্বৃত্তহীনতায় ভুগতে থাকা একপাল মানুষ দীর্ঘমেয়াদী বীমা করে নিল।
যাবতীয় সম্পদের ওয়ারিশ নিজের ঘাড়ে নিয়ে আমাকে
আশ্রয় দিয়েছিল সোনার কাঠি-রূপার কাঠির বিছানায়।
প্রয়োজন মতো কাঠিবদল করে সদব্যবহার করে
ফের কাঠিবদল হয় ।
এভাবেই কাটছিল বেশ, অসূর্যস্পর্শা, ললনা, রমনী, অর্ধাঙ্গিনী, জননী, মাগী...
এরপর এল বর্গী, বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনার উপায় কী?
ঐ যে কাঠিবদল; আমি জেগে উঠলাম।
ঘুমাইনি তারপর আর। আমি ভোট দিলাম, মাঠে নামলাম, আজ মানুষের কর্মক্ষেত্রে চরে বেড়াই,
কাজের শোভা বাড়াই।
উপযোগবাদী রাষ্ট্রে আপাদমস্তক মূল্যায়ন পেয়েছি,
অপচয় হয়নি একফোটা।
আমায় ছাড়া অচল বিশ্ববাজার: সাবান, বিড়ি, মোজা,
গাড়ি, সেভিংক্রিম, আন্ডারওয়্যার সর্বত্র অবাধ বিচরণ।
এমনকি আমার প্রত্যেক প্রত্যঙ্গ আজ বিশ্ববাজারে বেস্টসেলার।
এখানে শেষ নয়, রেসের ঘোড়া হয়ে সরেজমিনে এসেছি
মাঠে,
একশ মনের পাথর পায়ে বেঁধে দৌড়ে চলি
সম অধিকারের দাবিতে,
সোনার কাঠি-রূপার কাঠি ফেলে এসেছি বহু আগে।
কর্তার খায়েশ মেটাতে বেরিয়েছি ঘর থেকে,
যা পারিনি, মানুষ-পদবী ফেরত নিতে
তাই বাসে-ঘরে-ঘাটে-মাঠে-মন্দিরে......
নটে গাছটি মুড়োয় আর আমার কথা ফুরোয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন