শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২০

প্রিয় অগ্রজ ।। উৎপলকুমার বসুর স্বনির্বাচিত কবিতাগুচ্ছ

মাসিক কবিতাপত্র সাপ্তাহিক অনলাইন ।। সংখ্যা ৪।। ২৯ আগষ্ট, ২০২০



উৎপলকুমার বসুর স্বনির্বাচিত কবিতাগুচ্ছ




এই বছর

‘বরষাব্যাকুল’ এই শব্দটির আড়ালে আড়ালে
আমি ভ্রাম্যমাণ সারাদিন। ভাবি, সে-ও বনের
ওধারে চলে চলে যেতে পারে সাপুড়ের মতো।
ফনাতোলা রৌদ্র ও উত্তাপে আমি কম্পমান।
আমার অতটা সাহস নেই। যদি প্রতিটি সমাস
আজ ছেড়ে যায়, যদি তৎপুরুষ শেষকালে চিনেও
না চেনে তবে কার আশ্রয়ে যাব, কোথা গেলে
ঝড় আসবে, বৃষ্টি পাবো?
স্বপ্ন-পৃথিবীর সত্য
সরে গেছে নিম্নচাপ।
ধরে গেছে অকালবর্ষণ।
এই স্রোত বৈতরণী বটে।
নদী পাথরের মতো স্থির ---- কখনো উত্তাল।
পুবের বাতাস
কথায় কথায় ধানক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ছে।
আনন্দিত মানুষজনের পিঠে ডানা দেখা যায় ----
তারা পাখি-পতঙ্গের মতো বাতাসে উড্ডীন।
ছোটোরা ইস্কুলে যাচ্ছে ---- বড়োরা চাষের কাজে।
কেউ কেউ শুধুই বাতাসে ওড়ার সুখে
যত্রতত্র ডানা মেলছে।


শাসনযন্ত্র

পাল্লাস ---- প্রসূতিপারা, স্ফীতোদের, নৌবাহিনীর নেতা।
আশ্রয়দাত্রী তুমি, ঐ নাবিকশ্রেষ্ঠরে তীরে বেঁধে রাখো।
সূর্যদেব অকস্মাৎ মধ্যাহ্নকটালে যেন অস্থির, অনিশ্চয়----
ঢেউ দিগন্তে লাফিয়ে ওঠে ---- সাতসমুদ্রের লবণ সাক্ষর
লাগে আকাশের গায়---- হায়, দাগানো তালিকা এই
কর্মচারীর হাতে, তাই নিয়ে ঘুরি, এত নাম, শতাধিক,
এদের কোথায় সন্ধান পাবো? কোন জনপদে? কোন
গোপন কৌশলে এদের দ্বীপান্তরী করা যাবে, জলচর
দেব ও দেবতাগণে মিনতি জানাই, পায়ে পড়ি, এ-যাত্রা
উদ্ধার করো, ঠিক সময় মতই যেন এদের গ্রেপ্তার করি,
অত্যাচারে অভিভূত করে রাখি ---যতক্ষণ জলযান অ-প্রস্তুত,
আমাদেরও তৈরী হতে যতক্ষণ লাগে।


ছায়াছবি

কিমিয়া হে, ফিরে আসি পুরনো ফটোর পাশে ----
আমাকেও নিশ্চয়তা দান করো। ডেকে নাও
শত বছরের অতীত ছবির মধ্যে, বৈঠকখানার
ফরাসের এক কোনে জবুথুবু হয়ে বসি, বাবুদের জন্য
বাজারের যে ক-টি ফল ঐ গামছায় বাঁধা রইল তার দাম
কে দেবে জানি না, এই বিচারাধীনের আবার গারদ হবে,
বিদ্যার নামে যত ছলাকলা, ঘৃণায় শরীর যেন
ক্ষয়ে যেতে থাকে, দরজায় কঙ্কাল ঝোলে,
প্রজা, এই তোর নিশ্চয়তাজ্ঞান? এই তোর নির্ভুল কিমিয়া?


স্মৃতি

এক নগর দেখেছি আমি ---- জনপদ, চৈত্য ও বিহার
দিগন্তের কাছাকাছি ----গয়া থেকে বৌদ্ধগয়ার পথে যেতে যেতে,
রৌদ্রে পোড়া যাত্রীদলে আরো অনেকে দেখেছে,
বলেছে স্তম্ভিত হয়ে ‘ঐ সেই পাটলীপুত্র স্থান...’
গাছে গাছে চৌসা আমের ফল বাতাসে উজ্জ্বল
আমাদের যাত্রাপথে, গতিময় ধ্বংসোন্ম ুখ গ্রীষ্ম-দুপুরের
ঝড় তখনই নামল, নগর-গ্রাম উল্টে দেওয়া কালো
ইতিহাস। আমরা মাটিতে শুয়ে আতঙ্কিত, দৃশ্যহীন, ভূতের স্বরূপ।


স্বাধীনতা দিবস

ভিজে জামা-কাপড়ের স্তূপ উঠোনের তারে
মেলে দিতে গিয়ে দেখি---
একী এ যে কাঁটাতার,
রক্ত ঝরছে
ঐ দিকে, কুয়াশায়, বহু কিছু ছড়িয়ে রয়েছে,
বাল্যের খেলার বাক্স, রাঙা রথ, পাতা-ছেঁড়া বই
এবং অনতিদূরে প্রকান্ড প্রান্তর এক, ছায়াচ্ছন্ন,
শত শত বালক-বালিকা বুঝি কোনো উৎসবে হাজির---
আমি হাত নাড়ি,
তারা যেন দেখেও দেখে না---
ক্রমশই ছায়ায় বিলীন হয়।


উৎপলকুমার বসুর স্বনির্বাচিত কবিতাগুচ্ছ কবি নিজেই নির্বাচন করে আমাকে পাঠিয়েছিলেন, যেগুলি আমার সম্পাদিত 'এবং বিকল্প' পত্রিকায় ২২-তম সংখ্যায় (জানুয়ারি, ২০১১)-তে প্রকাশিত হয়। কবির ছবিগুলি আমার তোলা। ---রাজীব সিংহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন